কানাডা যেতে কত টাকা লাগে ২০২৬ - যাওয়ার উপায় ও যোগ্যতা জানুন

বাংলাদেশ থেকে অনেকেই চাকরি, পড়াশোনা অথবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কানাডা যেতে আগ্রহী। উত্তর আমেরিকার এই দেশটি অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অত্যন্ত উন্নত।
কানাডা যেতে কত টাকা লাগে
উন্নত জীবনযাপন এবং তুলনামূলকভাবে বেশি আয়ের সুযোগ থাকায় সারা বিশ্ব থেকে মানুষজন এখানে পাড়ি জমাচ্ছে, কারণ এই দেশে কাজের সর্বনিম্ন বেতনও বেশ ভালো। তবে, কানাডা যাওয়ার জন্য ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী খরচের তারতম্য দেখা যায়।

কানাডার ভিসা পেতে হলে নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। যারা অধিক ইনকামের প্রত্যাশায় উন্নত জীবন উপভোগ করতে এই দেশে যেতে চান, তাদের জন্য কানাডা যেতে কত টাকা লাগে, কানাডা যাওয়ার সহজ উপায় এবং কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ

কানাডা যেতে কত টাকা লাগে ২০২৬

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে কানাডা অন্যতম, যেখানে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ এই দেশে আসে কেউ ফার্মের ভিসায় কাজ করতে, কেউবা পড়াশোনা, ভ্রমণ কিংবা চিকিৎসার জন্য। তবে এই দেশে আসার আগে অবশ্যই প্রয়োজনীয় যোগ্যতাগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।

কানাডা অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগতভাবে এতটাই উন্নত যে এখানে কর্মীদের বেশ ভালো বেতন দেওয়া হয়। পাশাপাশি, এখানে মানসম্পন্ন শিক্ষা অর্জন এবং উন্নত চিকিৎসার সুযোগও রয়েছে।

এই দেশে যাওয়ার জন্য আপনার মোট কত টাকা খরচ হবে, তা সম্পূর্ণরূপে ভিসার ক্যাটাগরির ওপর নির্ভর করে। নিচে ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী কোন ভিসায় গেলে কত টাকা খরচ হবে তার একটা আনুমানিক খরচ উল্লেখ করা হল;

কানাডা টুরিস্ট বা ভিজিট ভিসা কত টাকা লাগে?

আপনি যদি এই দেশে ভ্রমণ করতে যেতে চান, তবে এই ভিসার মাধ্যমে ৩ মাস (অর্থাৎ ৯০ দিন) থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত থাকার সুযোগ পাবেন। এই ধরনের ভিসার জন্য আনুমানিক খরচ হতে পারে ৪ লক্ষ টাকা থেকে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে।

কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কত টাকা লাগে?

বাংলাদেশ থেকে কাজের উদ্দেশ্যে কানাডা যেতে চাইলে আপনার কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা লাগবে। যদিও সরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে কানাডার কাজের ভিসার প্রসেসিং করা যায় না, তবে আপনি নিজে নিজে ভিসা প্রসেসিং করতে পারবেন।
আপনি যদি কানাডায় স্থায়ীভাবে কাজ করার পরিকল্পনা করেন, তাহলে এই ভিসাতেই আপনাকে যেতে হবে। এই ভিসা মূলত কাজের জন্য অনুমতি দেয় এবং এর মাধ্যমে আপনি স্থায়ীভাবে সেখানে কাজ ও বসবাস করতে পারবেন।

এই ভিসার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে, যার মধ্যে অন্যতম হলো পর্যাপ্ত ব্যাংক ব্যালেন্স থাকা। আপনার অ্যাকাউন্টে সর্বনিম্ন প্রায় ১০ লক্ষ টাকা থাকতে হবে। এছাড়া আপনাকে অনলাইনের মাধ্যমে এই ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। সবমিলিয়ে, এই ভিসায় কানাডা যেতে আপনার মোট খরচ হতে পারে ৮ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকার মতো।

কানাডার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সরকারি ও বেসরকারি উভয়ভাবেই প্রসেসিং করা যায়। সরকারিভাবে এই ভিসা প্রসেসিং করতে পারলে খরচ অনেক কম হয়, তবে তার জন্য আপনাকে অবশ্যই সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

অন্যদিকে, বেসরকারিভাবে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে স্বপ্নের দেশ কানাডায় গেলে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি লাগে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে কানাডা যেতে আনুমানিক প্রায় ৮ লক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

তবে, আপনি যদি নিজে নিজে ভিসার প্রসেসিং করতে পারেন, তাহলে নামমাত্র খরচে এই স্বপ্নের দেশটিতে পাড়ি জমানো সম্ভব।

কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা কত টাকা লাগে?

কানাডা একটি উন্নত রাষ্ট্র হওয়ায় এখানে অনেক মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে আপনি উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে পারেন। এই দেশে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট-টাইম কাজ করে টাকা ইনকাম করার সুযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, পড়ালেখা শেষ করার পর প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এই দেশেই স্থায়ীভাবে কাজ করে থাকে।
এই ভিসার জন্য আপনাকে কমপক্ষে এইচএসসি পাস এবং ভালো রেজাল্টধারী হতে হবে। সেই সাথে আইইএলটিএস-এও ভালো স্কোর থাকতে হবে, যেখানে সর্বনিম্ন ৪ পয়েন্ট অর্জন করা আবশ্যক। মোটকথা, এই স্টুডেন্ট ভিসাটি করার জন্য আপনার ৪ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকার মতো খরচ হতে পারে।

কানাডা কৃষি ভিসা কত টাকা লাগে?

কানাডা একটি উন্নত দেশ হলেও তারা কৃষিখাতে যথেষ্ট নজর দেয়, যে কারণে তাদের প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ফলে প্রতি বছরই তারা সরকারি মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে আসে। এ কারণে কানাডার কৃষি ভিসার চাহিদা অনেক বেশি।

আপনি চাইলে এই ভিসার মাধ্যমে কানাডা যেতে পারেন। তবে এই ধরনের কাজে আপনার অভিজ্ঞতা থাকলে আপনি বেশ ভালো অঙ্কের বেতন পাবেন। এই কৃষি ভিসার জন্য আপনার খরচ হতে পারে ৮ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ১০ লক্ষ টাকার মতো।

কানাডা জব ভিসা কত টাকা লাগে?

কানাডার বিভিন্ন কোম্পানি প্রতি বছর সরকারিভাবে হাজার হাজার শ্রমিক নিয়োগ করে এবং আপনিও সরকারি প্রক্রিয়ায় জবের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সরকারিভাবে এই দেশে গেলে আপনার খরচ অনেক কমে যাবে।

কিন্তু দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে যেতে চাইলে আপনার ভিসা খরচ অনেক বেড়ে যাবে। যদি আপনি জব ভিসার মাধ্যমে কানাডায় যেতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার খরচ পড়তে পারে ৮ থেকে ১৬ লাখ টাকার মতো। এই খরচ পুরোপুরি এজেন্সির ওপর নির্ভর করে, কারণ জব ভিসার প্রকৃত খরচ এর চেয়ে অনেক কম হয়ে থাকে।

যদি কানাডার কোনো কোম্পানিতে আপনি নিজে জব খুঁজে নিতে পারেন, তবে অল্প খরচে বাংলাদেশ থেকে নিজেই ভিসা প্রসেসিং করে যেতে পারবেন। এজেন্সির মাধ্যমে কানাডার জব ভিসার প্রসেসিং করলে খরচ অনেক বেশি হয়।

কানাডা শ্রমিক ভিসা কত টাকা লাগে?

কানাডা বিভিন্ন কাজের জন্য শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে। আপনার যদি কোনো নির্দিষ্ট কাজের দক্ষতা থাকে এবং আপনি সেই দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে ভিসা করতে পারেন, তবে অনেক ভালো বেতনে কাজ পাবেন। এই কারণে দেশটির কোম্পানিগুলো প্রতি বছর সরকারি মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শ্রমিক নিয়ে থাকে।
কানাডা শ্রমিক ভিসা অনেক প্রবাসীর কাছে 'লেবার ভিসা' নামে পরিচিত। এটি এক ধরনের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা। এই ভিসা করার অফিসিয়াল খরচ মাত্র ২০-৩০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। এজন্য সাধারণত নিজে নিজে শ্রমিক ভিসার প্রসেসিং করতে হয়।

তবে বাংলাদেশ থেকে এজেন্সির মাধ্যমে কানাডার শ্রমিক ভিসা নিয়ে যেতে প্রায় ১০ লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। উল্লেখ্য, অনেক সময় এজেন্সি টুরিস্ট ভিসা ধরিয়ে দিয়ে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিতে পারে, তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।

কানাডা ভিসার আবেদন ফি ও আনুষঙ্গিক খরচ

ভিসা ফি সহ আরও কিছু খরচাপাতি রয়েছে যা এই দেশটিতে যাওয়ার জন্য আপনাকে বহন করতে হবে। চলুন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।

১. ভিসা আবেদন ফি (সরকারিভাবে): দর্শনার্থী ভিসা, স্টাডি পারমিট, বা ওয়ার্ক পারমিট এর জন্য আবেদন ফি সাধারণত $100 CAD থেকে $155 CAD পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ৮,২০০ টাকা থেকে ১৪,৭৫০ টাকা।

আপনার দেওয়া তথ্যে যে ৪ হাজার থেকে শুরু করে ১০৫০০ টাকা এর কথা বলা আছে, তা বর্তমান সরকারি ফি থেকে কিছুটা কম বলে মনে হচ্ছে।

২. বায়োমেট্রিক ফি: একক আবেদনকারীর জন্য এটি সাধারণত $85 CAD। পরিবার হিসেবে সর্বোচ্চ ফি $170 CAD। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ৭,০০০ টাকা থেকে ৮,০০০ টাকা।

৩. মেডিকেল পরীক্ষার খরচ: স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ চিকিৎসকের উপর নির্ভর করে এবং আপনার দেওয়া তথ্য মতে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা বা এর কাছাকাছি হতে পারে। এটি সরকারি ফি নয়, তবে ভিসা প্রক্রিয়ার একটি আবশ্যকীয় ধাপের খরচ।


৪. ইমিগ্রেশন এজেন্সি ও দালালদের খরচ: আপনার দেওয়া তথ্যের সাথে একমত যে, ব্যক্তিগতভাবে ভিসা প্রসেসিং করলে খরচ অনেক কম হয়। কিন্তু কোনো বেসরকারি এজেন্সি বা দালালের সহযোগিতা নিলে তাদের সার্ভিস চার্জ বা প্রসেসিং ফি বাবদ আপনার ২ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকা বা তারও বেশি খরচ হতে পারে। এই খরচ সরকারি বা বাধ্যতামূলক নয়, বরং এটি এজেন্সির সার্ভিস চার্জ।

কম খরচের জন্য: ভিসা প্রসেসিং খরচ কমাতে চাইলে কানাডা সরকারের IRCC এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজে নিজেই অনলাইনে আবেদন করার চেষ্টা করুন।

সর্বশেষ তথ্যের জন্য যেহেতু ভিসা ফি ও বায়োমেট্রিক ফি প্রায়ই পরিবর্তিত হয়, তাই আবেদন করার আগে সর্বদা কানাডা সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা তাদের ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (VAC) এর ওয়েবসাইটে সর্বশেষ ও নির্ভুল তথ্য দেখে নেওয়া উচিত।

নিজে নিজে ভিসা প্রসেসিং করলে কানাডা যাওয়ার খরচ কম হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন বেসরকারি এজেন্সি কিংবা দালালের মাধ্যমে কানাডা ভিসা প্রসেসিং করলে ভিসা খরচ অনেক বেশি হয়ে থাকে।

কানাডা যাওয়ার যোগ্যতা

অনেকেই কেবল সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়গুলো জানেন, কিন্তু কানাডা যাওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট ধারণা থাকে না। এর ফলেই স্বপ্নের এই দেশটিতে যাওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তাই কানাডা যাওয়ার উপায় জানার আগে অবশ্যই কানাডা যাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি।
উন্নত এই দেশটিতে ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা পূরণ করা আবশ্যক। অন্যথায়, কানাডা ভিসার আবেদন করে আপনি সফল হতে পারবেন না। মনে রাখবেন, কানাডা যাওয়ার যোগ্যতা ভিসা কানাডা ক্যাটাগরি অনুযায়ী কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
কানাডা যাওয়ার যোগ্যতা
কানাডা ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে, আবেদনকারীদের মধ্যে নিম্নে উল্লেখিত যোগ্যতাসমূহ থাকতে হবে:
  • বৈধ পাসপোর্ট
  • আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
  • মেডিকেল সার্টিফিকেট
  • করোনা ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট (যদি লাগে)
  • ফাইনান্সিয়াল সলভেন্সি ডকুমেন্ট (ব্যাংক স্টেটমেন্ট)
  • জন্ম নিবন্ধন/ভোটার আইডি কার্ড
  • একাডেমিক সার্টিফিকেট
  • একাডেমিক পরীক্ষার ট্রান্সক্রিপ্ট
  • এলএমআইএ নাম্বার (ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ক্ষেত্রে)
  • জব অফার লেটার (ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ক্ষেত্রে)
  • হোটেল বুকিং (টুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রে)
  • ট্রাভেল রেকর্ড (টুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রে)
  • ন্যূনতম আইইএলটিএস স্কোর
  • স্কিল সার্টিফিকেট (ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ক্ষেত্রে)
  • ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স ডকুমেন্ট (ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ক্ষেত্রে)
  • আবেদনকারীর ন্যূনতম বয়স

কানাডা যেতে কি কি লাগে?

কানাডায় যেতে হলে আগ্রহীদের প্রথমেই যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। এরপর ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে, কারণ এই উন্নত দেশে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
  • বৈধ পাসপোর্ট
  • কানাডা ভিসা আবেদন ফরম
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • ভিসা আবেদন ফি
  • জাতীয় পরিচয় পত্র
  • আইইএলটিএস স্কোর
  • আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট)
  • মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
  • পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অফার লেটার
  • রিকমেন্ডেশন লেটার
  • ট্রাভেল রেকর্ড
  • NOC

কানাডা যাওয়ার সহজ উপায়

উন্নত জীবনযাপন, ভালো চাকরি কিংবা মানসম্মত পড়াশোনার জন্য কানাডা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি গন্তব্য। এই কারণেই অভিবাসীদের পছন্দের তালিকায় দেশটি শীর্ষে রয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে আগ্রহীরা বিভিন্ন ধরনের ভিসা নিয়ে সহজে কানাডা যেতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে: কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা, বিজনেস ভিসা, এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম, এবং ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ইত্যাদি।
১। এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম: কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস (পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি) করার জন্য এটি নতুন অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রক্রিয়া। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজের সুযোগ পান।

২। কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা: বাংলাদেশ থেকে কানাডা যাওয়ার অপেক্ষাকৃত সহজ উপায় হলো স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যাওয়া। এর জন্য কানাডার কোনো অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথমে ভর্তি হতে হবে।

৩। কানাডা ভিজিট/ভ্রমণ ভিসা: এই ভিসা পাওয়া তুলনামূলকভাবে কঠিন। আবেদনকারীকে দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের সময় প্রমাণ করতে হবে যে তিনি কানাডা ভ্রমণ শেষে অবশ্যই দেশে ফিরে আসবেন। ভালো ট্রাভেল রেকর্ড ও পর্যাপ্ত আর্থিক সক্ষমতা থাকলে এই ভিসা সহজে পাওয়া যায়।

৪। বিজনেস ভিসা: কানাডায় ব্যবসা করতে আগ্রহী হলে কমপক্ষে ২ লাখ কানাডিয়ান ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। এই শর্ত পূরণ করতে পারলে বিজনেস ভিসা সহজে পাওয়া সম্ভব।

৫। ওয়ার্ক ভিসা: কানাডার কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাকরির অফার লেটার পেলে খুব সহজে কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বা কাজের অনুমতি পাওয়া যায়। এছাড়াও, বাংলাদেশ থেকে আরও অনেক আইনি উপায়ে কানাডা যাওয়া সম্ভব।

সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়

অনেকেই বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে এ দেশে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। তাই যারা সরকারিভাবে যেতে চান, তাদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় জানা দরকার।
সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়
আপনি যদি সরকারিভাবে যেতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার আইইএলটিএস করা লাগবে এবং এর স্কোর কমপক্ষে ৬ থাকতে হবে। ভ্রমণের জন্য যদি সরকারিভাবে এদেশে যেতে চান, তবে ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন সংগ্রহ করতে হবে।

কাজের ভিসার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে চাইলে, আপনাকে এ দেশের কর্মসংস্থান প্রকল্পে ভিসা আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। চাকরি খোঁজার জন্য আপনি এই ঠিকানায় দেশের সরকারি ওয়েবসাইট (www.jobbank.gc.ca) ভিজিট করতে পারেন।

বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এ দেশে পড়াশোনা ও কাজের সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে আপনি এই সুযোগ নিতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের আগে সরকারি পারমিট সংগ্রহ করা প্রয়োজন। এছাড়া, স্কলারশিপের মাধ্যমেও আপনি আসতে পারেন।

এই উন্নত রাষ্ট্রটি প্রতি বছর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩ লক্ষ কর্মী নিয়োগ দেয়, যারা উন্নত মানব সমাজের অংশ হিসেবে এখানে কাজ করে।

চাকরির আবেদনের জন্য এ দেশের স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার বিবরণ দিয়ে একটি জীবনবৃত্তান্ত বা বায়োডাটা তৈরি করা লাগবে।

সরকারিভাবে বিদেশে যাওয়ার জন্য 'আমি প্রবাসী' প্ল্যাটফর্মে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে এই দেশের ভিসা আবেদন ফরম অনুসারে আপনাকে কয়েকটি ধাপে পূরণ করতে হবে।

আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা মূল্যায়ন করে এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রামের অধীনে আপনাকে দক্ষ কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। নিয়োগের অনুমতি পেলে পরবর্তীতে অভিবাসী হওয়ার সুযোগও তৈরি হতে পারে। এই প্রোগ্রামে আবেদন করার জন্য তিনটি সরকারি পলিসি রয়েছে:
  • ফেডারেল স্কিল ওয়ার্কার প্রোগ্রাম 
  • এ দেশের এক্সপেরিয়েন্স ক্লাস
  • ফেডারেল স্কিল ট্রেড প্রোগ্রাম
এই প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে আপনি একটি মূল্যবান সুযোগ লাভ করতে পারবেন।

ফ্যামিলি ক্লাসঃ স্পনসরশিপ এ দেশে কেউ যদি পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান, তাহলে সরকারিভাবে স্পন্সরশিপের জন্য আবেদন করা আবশ্যক।

এলএমআইএঃ ওয়ার্ক ভিসা চাকরির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বিভিন্ন অফারের মধ্যে, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আপনার জন্য এখানে কাজের একটি আসন সুরক্ষিত করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী আবেদন করতে পারে।

প্রাদেশিক মনোনীত প্রোগ্রামঃ এ দেশের বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে মাঝে মাঝে শ্রমিকের অভাব বা 'লেবার ক্রাইসিস' দেখা যায়। সেই কারণে প্রাদেশিক মনোনীত প্রোগ্রামের মাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের এখানে কাজের অফার দেওয়া হয়ে থাকে।

ইনভেস্টমেন্ট ইমিগ্রেশন প্রোগ্রামঃ আপনি বিনিয়োগ করে এ দেশে ব্যবসা করার অনুমতি পেতে পারেন। একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী হিসেবে আপনি যদি এই দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করেন, তবে সরকার আপনাকে সেই অনুমতি দিতে পারে।

কানাডা যাওয়ার এজেন্সি

বাংলাদেশে কানাডা ভিসা প্রক্রিয়াকরণের জন্য বেশ কিছু এজেন্সি কাজ করছে। অনলাইন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নিচের তালিকায় কিছু এজেন্সির নাম ও ঠিকানা তুলে ধরা হলো।

দ্রষ্টব্য: এখানে উল্লেখিত কোনো এজেন্সির সাথেই আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কানাডা ভিসার জন্য এজেন্সির মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করার সময় সর্বদা নিজ দায়িত্বে ও সতর্কতার সাথে কাজ করবেন।
  • কানাডা ভিসা প্রসেসিং সেন্টার ঠিকানা ১১৬ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, ঢাকা ১২০৫
  • ওয়েস্টফোর্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস ঠিকানা হাউস নং ১৫, রোড নং ০৭, ঢাকা ১২১২
  • লেগাটো ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ভিসা কনসাল্ট্যান্টস ঠিকানা এপ্ট# বি২, সুপার নোভা, হাউস# ১০৭, রোড নং ১৩, ঢাকা ১২১৩
  • স্টাডি ইন কানাডা এডমিশন সেন্টার ঠিকানা ৯৯, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, করিমন বাজার, লেভেল -১৩, ঢাকা ১২১৫
  • স্কোশিয়া কন্সাল্ট্যান্টস ঠিকানা হাউস নং-৪০, কনকর্ড রয়েল কোর্ট, ৪র্থ ফ্লোর, রোড নং-১৬ নতুন, ২৭ পুরাতন, ধানমন্ডি র/এ, ঢাকা ১২০৯

কানাডা যেতে কত বয়স লাগে

কানাডায় যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বয়স ভিসার ক্যাটাগরির ওপর নির্ভর করে:
  • স্টুডেন্ট ভিসা: এই ভিসায় যেতে চাইলে প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
  • ওয়ার্ক ভিসা: কাজের ভিসায় যাওয়ার জন্য আপনার বয়স সর্বনিম্ন ২১ বছর হওয়া প্রয়োজন।
  • টুরিস্ট ভিসা: এই ভিসার ক্ষেত্রে বয়স ১৮ বছরের কম হলেও সমস্যা হয় না। তবে, অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অভিভাবকের অনুমতি বাধ্যতামূলক।
সাধারণত, ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ব্যক্তিরা কানাডা যাওয়ার সুযোগ-সুবিধা বেশি পান, কারণ তারা প্রায় সব ধরনের অভিবাসন ও কাজের মাধ্যমে আবেদন করার উপযুক্ত হন।

বাংলাদেশ থেকে কানাডা যেতে কত সময় লাগে

বাংলাদেশ থেকে কানাডা যেতে বর্তমানে ন্যূনতম প্রায় ১৯ ঘন্টা থেকে শুরু করে ২২ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে, বিমানের বিরতির সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে এই সময় কম বা বেশি হয়:
  • একবার বিরতিসহ: যেসব ফ্লাইটে একবার বিরতি থাকে, সেগুলোর মাধ্যমে কানাডা পৌঁছাতে নূন্যতম প্রায় ২৪ ঘন্টা থেকে শুরু করে ১ দিন ৬ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
  • একের অধিক বা দুইবার বিরতিসহ: যেসব ফ্লাইটে একাধিক বা দুইবার বিরতি থাকে, সেগুলোর ক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রায় ১ দিন ৯ ঘন্টা থেকে শুরু করে ২ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

কানাডা যেতে ielts কত পয়েন্ট লাগে?

কানাডায় ভিসা আবেদনকারীদের জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকা বাধ্যতামূলক। বিশেষত যারা পড়াশোনা বা কাজের উদ্দেশ্যে কানাডা যেতে চান, তাদের ন্যূনতম আইইএলটিএস স্কোর ৬.০ থাকতে হবে। তবে, মনে রাখতে হবে যে প্রতিটি ব্যান্ডে (যেমন: লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং, স্পিকিং) কমপক্ষে ৫.৫ স্কোর থাকা প্রয়োজন।

সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)

প্রশ্ন: বাংলাদেশ থেকে কানাডার বিমান ভাড়া কত?
উত্তর: বর্তমান বাংলাদেশ থেকে কানাডার বিমান ভাড়া ২ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

প্রশ্ন: কানাডা ভিসা আবেদন ফি কত?
উত্তর: কানাডার ভিসার আবেদন ফি ভিসা ক্যাটাগরিভেদে সাধারণত $১০০ থেকে $২৫০ কানাডিয়ান ডলারের মধ্যে থাকে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে কানাডার এম্বাসি কোথায়?
উত্তর: বাংলাদেশে কানাডার এম্বাসি ঢাকার গুলশানে অবস্থিত।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ টু কানাডা কত কিলোমিটার?
উত্তর: বাংলাদেশ থেকে কানাডার দূরত্ব প্রায় ১০,৯৯৪ কিলোমিটার।

প্রশ্ন: কানাডা ১ ডলার বাংলাদেশের কত টাকা?
উত্তর: বর্তমান কানাডা ১ ডলার বাংলাদেশের প্রায় ৮৮ টাকা।

লেখকের শেষ মতামত

কানাডা ভিসার খরচ সাধারণত বেসরকারি এজেন্সির ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। তবে, এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত বা রেজিস্টার্ড এজেন্সির সাহায্য নিতে হবে এবং প্রতারকদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।

বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য কানাডা যাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে এবং তারা বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসার মাধ্যমে যেতে পারেন। তবে ভিসার খরচের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে এজেন্সি বা পরামর্শদাতাদের ওপর নির্ভর করে।

তাই, যেকোনো ভিসা প্রক্রিয়াকরণের পূর্বে পরিচিত বা বিশ্বস্ত দালাল বা এজেন্সির সাহায্য নেওয়া উচিত। এতে করে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরিফুল প্লাস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url