ওমান কাজের বেতন কত ২০২৬ - ওমান কোন কাজের চাহিদা বেশি
ওমান মধ্যপ্রাচ্যের একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় গন্তব্য, বিশেষ করে বাংলাদেশি
প্রবাসীদের জন্য যেখানে রয়েছে কাজের সুযোগ। তবে, ওমানে কাজ করতে যাওয়ার আগে
বেতন কাঠামো সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তারিত তথ্য জানা অপরিহার্য। এর মধ্যে রয়েছে
সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনসীমা এবং বিভিন্ন প্রকার ভিসার সাথে সম্পর্কিত বেতনের
হিসাব।
এই নিবন্ধে আমরা ওমানের কর্মজীবনের গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক দিকগুলি নিয়ে আলোচনা
করব। আমরা ওমানের ন্যূনতম মজুরি কেমন, ড্রাইভিং ভিসার বেতন কত হতে পারে, সাধারণ
শ্রমিকদের বেতন কাঠামো কেমন, এবং দোকান ভিসার বেতন কেমন হয়ে থাকে, সে সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরব।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ
ওমান বেতন কত ২০২৬
বাংলাদেশ থেকে যারা ওমানে কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান, তাদের মধ্যে অধিকাংশেরই
প্রধান জিজ্ঞাসা থাকে—ওমানে বেতন কত? মূলত, ওমানে বেতন নির্ধারণ হয় কাজের ধরন
এবং দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। আপনার কাজের মান যত ভালো হবে এবং সেই কাজে যত বেশি
দক্ষতা থাকবে, প্রতি মাসে আপনার আয়ের পরিমাণ তত বেশি হবে।
📌আরো পড়ুন👉ওমান যেতে কত টাকা লাগে
বর্তমানে যারা নতুন অবস্থায় ওমানে কাজ শুরু করছেন, তাদের সর্বনিম্ন মাসিক
বেতন বাংলাদেশি টাকায় সাধারণত ৩০,০০০ থেকে ৪৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, যারা অভিজ্ঞ এবং কোনো ভালো কোম্পানিতে কাজ করেন, তাদের মাসিক
বেতন বাংলাদেশি টাকায় কমপক্ষে ৬০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা বা তারও বেশি হতে
পারে।
ওমানে সর্বনিম্ন বেতন কত
ওমানে বিভিন্ন ধরনের কাজের প্রচুর চাহিদা থাকায় অনেকেই এই দেশটিতে
নিজেদের কর্মসংস্থান গড়ে তুলেছেন। যেহেতু এখানে একটি সর্বনিম্ন বেতনের
মানদণ্ড রয়েছে, তাই বহু লোক এখানে কাজ করতে আগ্রহী হন।
তাহলে জেনে রাখুন, ওমানে নতুনদের জন্য সর্বনিম্ন বেতন প্রায় ২৫ হাজার
টাকা হলেও, এর চেয়েও বেশি টাকা রোজগার করা সম্ভব।
যদি আপনি একটি কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী ভিসা
সংগ্রহ করেন, তবে আপনি প্রতি মাসে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা কিংবা তার
চেয়েও বেশি রোজগার করতে পারবেন। এজন্য সবসময় ভালো কোম্পানিতে যাওয়ার
চেষ্টা করুন, যাতে করে আপনার রোজগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
ওমানে সর্বোচ্চ বেতন কত
যে কোনো দেশেই কর্মসংস্থান গড়ে তোলা হোক না কেন, সেখানে একটি সর্বনিম্ন
ও সর্বোচ্চ বেতনের কাঠামো বিদ্যমান থাকে। আপনি ঠিক কী কাজের জন্য ভিসা
সংগ্রহ করছেন, আপনার বেতন মূলত তার ওপরই নির্ভর করবে।
ওমানে এমন অনেক কোম্পানি রয়েছে, যেখানে অভিজ্ঞ এবং উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন
কর্মীদের পক্ষে মাসিক ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করা
সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে, এই উচ্চ বেতন সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করবে আপনি
কোন ধরনের কাজে যোগ দিচ্ছেন এবং সেই কাজের ক্ষেত্রে কতটুকু অভিজ্ঞতা ও
দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন তার ওপর।
ওমান ড্রাইভিং ভিসা বেতন কত
ড্রাইভিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পেশা। ওমানে প্রবাসী কর্মী হিসেবে এই
পেশায় কাজ করার জন্য অবশ্যই একটি বৈধ লাইসেন্স থাকা আবশ্যক। সাধারণত
নতুন অবস্থায় এই পেশার বেতন কিছুটা কম থাকে, তবে দিনে দিনে অভিজ্ঞতা
অর্জন ও বিশ্বস্ততা বাড়ার সাথে সাথে বেতনও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
📌আরো পড়ুন👉ওমান ফ্রি ভিসার দাম কত
বাংলাদেশের হাজারো মানুষ ওমানে ড্রাইভিং ভিসায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু তারা
সেখানকার বেতন কাঠামো সম্পর্কে অবগত নন। বর্তমানে আপনি যদি ওমানে
ড্রাইভিং ভিসায় কাজ করতে পারেন, তবে প্রতি মাসে ভালো অঙ্কের টাকা ইনকাম
করার সুযোগ রয়েছে। তবে, বর্তমানে ওমানে ড্রাইভিং ভিসায় যেতে চাইলে আপনার
প্রায় ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
ওমানে নতুন অবস্থায় ড্রাইভিং ভিসার বেতন বাংলাদেশি টাকায় সাধারণত ২৫
হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে, যদি আপনি বাংলাদেশ
থেকেই ড্রাইভিং এর ওপর দক্ষ হয়ে ওমানে যেতে পারেন, তাহলে প্রতি মাসে আরও
বেশি ইনকাম করতে পারবেন। বর্তমানে ওমানে অভিজ্ঞ ড্রাইভারের বেতন
বাংলাদেশি টাকায় ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ওমান শ্রমিকদের বেতন কত?
ওমানে শ্রমিকদের বেতন মূলত তাদের কাজের ধরনের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে
নির্মাণ , কৃষি এবং পরিষেবা এই খাতগুলিতে কাজের ভিন্নতা অনুযায়ী বেতনে
পার্থক্য দেখা যায়। নিচে এই সকল ক্ষেত্রে শ্রমিকদের গড় বেতন কেমন হতে
পারে তা উল্লেখ করা হলো:
- নির্মাণ শ্রমিক: ১৫০-২৫০ ওমানি রিয়াল (৪৬,৬৫০-৭৭,৭৫০ টাকা)।
- গৃহকর্মী: ১২০-২০০ ওমানি রিয়াল (৩৭,৩২০-৬২,২০০ টাকা)।
- কৃষি শ্রমিক: ১৫০-২২০ ওমানি রিয়াল (৪৬,৬৫০-৬৮,৪২০ টাকা)।
- ক্লিনার: ১৪০-২০০ ওমানি রিয়াল (৪৩,৫৪০-৬২,২০০ টাকা)।
দ্রষ্টব্য: শ্রমিকদের জন্য প্রায়শই থাকা ও খাওয়ার সুবিধা কোম্পানি থেকে
সরবরাহ করা হয়, যা সামগ্রিকভাবে তাদের মোট আয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে
বাড়িয়ে তোলে।
ওমান দোকান ভিসা বেতন কত?
দোকান ভিসার অধীনে কর্মরত কর্মীদের বেতন সাধারণত দোকানের ধরন এবং কাজের
দায়িত্বের ওপর নির্ভর করে। নিচে এই কর্মীদের গড় বেতন কেমন হতে পারে তা
দেওয়া হলো:
📌আরো পড়ুন👉বাংলাদেশ থেকে ওমান বিমান ভাড়া কত?
- বিক্রয়কর্মী: ১৮০-৩০০ ওমানি রিয়াল (৫৫,৯৮০-৯৩,৩০০ টাকা)।
- ক্যাশিয়ার: ২০০-৩৫০ ওমানি রিয়াল (৬২,২০০-১০৮,৮৫০ টাকা)।
- দোকান ম্যানেজার: ৩৫০-৫০০ ওমানি রিয়াল (১০৮,৮৫০-১৫৫,৫০০ টাকা)।
অতিরিক্ত সুবিধা: কিছু দোকানে কর্মীদের বেতনের পাশাপাশি বিক্রয়ের ওপর
কমিশন, থাকার সুবিধা , এবং পরিবহন ভাতা-ও প্রদান করা হয়ে থাকে।
টিপস: দোকান ভিসার অধীনে কর্মরত কর্মীদের জন্য ইংরেজি বা আরবি ভাষা জানা
এবং গ্রাহক সেবায় দক্ষতা থাকলে, তাদের বেতন বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা
উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
ওমানে বেতন বাড়ানোর উপায়
ওমানে একজন প্রবাসী হিসেবে বেতন বাড়ানোর বিষয়টি অনেকের জন্যই একটি বড়
চ্যালেঞ্জ। এটি শুধু কাজ করে যাওয়ার ওপর নির্ভর করে না, বরং বেশ কিছু
কৌশল এবং দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। মানুষের মতো করে, বাস্তবতার নিরিখে
বেতন বাড়ানোর প্রধান উপায়গুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
ওমানে আপনার বর্তমান বেতন বাড়ানোর জন্য আপনি তিনটি প্রধান দিকে মনোযোগ
দিতে পারেন: ব্যক্তিগত দক্ষতা উন্নয়ন, কৌশলগত পদক্ষেপ এবং সঠিক সময়ে
আলোচনা।
- ব্যক্তিগত দক্ষতা ও মান বাড়ানো
- কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়া
- সঠিক সময়ে বেতন নিয়ে আলোচনা
বেতন বাড়ানোর জন্য শুধু কাজ করা যথেষ্ট নয়, সঠিক সময়ে এবং সঠিক
পদ্ধতিতে আলোচনা করতে জানতে হবে।
আলোচনার জন্য সঠিক সময় বাছা:
- কোম্পানি যখন কোনো বড় লাভ করেছে বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রোজেক্ট সফলভাবে শেষ করেছে।
- আপনার বার্ষিক পারফরম্যান্স রিভিউ এর সময়।
- আপনার যখন নতুন কোনো দায়িত্ব শুরু হয়।
আত্মবিশ্বাসী হোন, কিন্তু বিনয়ী: সরাসরি "আমার বেতন বাড়ানো উচিত" না
বলে, "আমার বর্তমান কাজ ও অর্জন বিবেচনা করে, এবং বাজারের গড় বেতনের
সাথে সামঞ্জস্য চ রেখে, আমি [একটি নির্দিষ্ট অঙ্ক] বেতন প্রত্যাশা করছি"
– এভাবে আলোচনা শুরু করুন। সবসময় মনে রাখবেন, আপনি আপনার অবদানের জন্য
ন্যায্য মূল্য চাইছেন।
এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে, ওমানের চাকরির বাজারে আপনার অবস্থান মজবুত
হবে এবং আপনার বেতন বাড়ানোর সুযোগ অনেক গুণ বেড়ে যাবে।
ওমানে কোন কাজের চাহিদা বেশি
ওমান সরকার এখন দেশের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনছে এবং একই সাথে নিজেদের
নাগরিকদের জন্য কাজের সুযোগ বাড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশি
কর্মীদের জন্য কিছু কাজের চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে যেমনঃ
📌আরো পড়ুন👉ওমান যেতে কি কি কাগজপত্র লাগে
- কনস্ট্রাকশনের কাজ
- ড্রাইভিং এর কাজ
- ইলেকট্রিশিয়ান ও প্লাম্বার এর কাজ
- ক্লিনার এবং বাগানের কাজ
- হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং ওয়েটারের কাজ
- কৃষিকাজ
- কোম্পানির কাজ
১. কনস্ট্রাকশনের কাজঃ ওমানে কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণ কাজের চাহিদা হলো সব
সময়ের রাজা। বড় বড় রাস্তা, সেতু, নতুন ভবন বা পর্যটন কেন্দ্র তৈরি হোক,
এই কাজে সবসময় প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন। আপনি যদি রাজমিস্ত্রি, রড
বাইন্ডার বা সাধারণ শ্রমিক হিসেবে যান, তবে কাজ পাবেনই। তবে এটি সবচেয়ে
বেশি শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এবং সাধারণত বেতন সর্বনিম্ন দিকের হয়ে থাকে।
২. ড্রাইভিং এর কাজঃ ড্রাইভিং-এর চাহিদা সবসময়ই উঁচুতে থাকে। কারণ ওমানে
পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা ততটা উন্নত নয়। ব্যক্তিগত গাড়ি,
কোম্পানির ডেলিভারি ভ্যান বা ভারী ট্রাক চালানোর জন্য চালকের দরকার হয়।
আপনার কাছে যদি ওমানি বা জিসিসি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে, তাহলে অন্য সবার
চেয়ে আপনার মূল্য অনেক বেশি এবং বেতনও তুলনামূলকভাবে ভালো হয়।
৩. ইলেকট্রিশিয়ান ও প্লাম্বারঃ নির্মাণ কাজের সাথে তাল মিলিয়ে
ইলেকট্রিশিয়ান এবং প্লাম্বারদের চাহিদা খুব বেশি। শুধু নতুন ভবনে নয়,
পুরনো ভবনে রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও এদের দরকার হয়।
আপনার যদি কোনো সরকারি বা স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেনিং সার্টিফিকেট
থাকে এবং হাতে-কলমে দক্ষতা থাকে, তবে আপনি একজন অদক্ষ শ্রমিকের চেয়ে
দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেশি বেতনে কাজ পেতে পারেন। কারণ দক্ষ লোক পেলে
কোম্পানিরা টাকা দিতে দ্বিধা করে না।
৪. ক্লিনার এবং বাগানের কাজঃ ক্লিনার বা পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চাহিদা
স্থিতিশীল। অফিস, শপিং মল বা বড় আবাসিক এলাকাসবখানেই ক্লিনার দরকার। এটি
সাধারণত কম বেতনের কাজ, তবে কাজের সুযোগ সহজেই পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, বাগানের কাজের চাহিদা তুলনামূলকভাবে সীমিত, মূলত
ল্যান্ডস্কেপিং বা ব্যক্তিগত এস্টেট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এদের দরকার হয়।
৫. হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং ওয়েটারের কাজঃ ওমান পর্যটনে জোর দেওয়ায় হোটেল
বা রেস্টুরেন্টের কাজ এবং ওয়েটারের চাহিদা বাড়ছে। আপনি যদি ইংরেজি বলতে
পারেন, গ্রাহকদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারেন এবং আপনার কাজের প্রতি
যত্নশীল হন, তবে এই খাতে ভালো বেতনের সাথে টিপস পাওয়ারও সুযোগ থাকে।
৬. কৃষিকাজঃ কৃষিকাজের চাহিদা ওমানে খুবই কম। যেহেতু দেশটি
মরুভূমি-প্রধান, তাই এখানে হাতেগোনা কিছু ফার্ম বা খেজুর বাগান ছাড়া বড়
ধরনের কৃষিকাজ হয় না। এই খাতে কাজের সুযোগ সীমিত এবং মূলত খুব নির্দিষ্ট
কিছু এলাকায় পাওয়া যায়।
৭. কোম্পানির কাজঃ এই শব্দটি খুবই সাধারণ, তবে বাস্তবে এর অর্থ হলো আপনার
বিশেষ কোনো কাজের যোগ্যতা। আপনি যদি হিসাবরক্ষক, বিক্রয়কর্মী,
স্টোরকিপার, বা কোনো যন্ত্রের মেকানিক হন তখনই 'কোম্পানির কাজ'-এ আপনার
কদর বেশি। অর্থাৎ, আপনার নির্দিষ্ট দক্ষতা যত বেশি হবে, এই ধরনের কাজে
আপনার সুযোগ এবং বেতন তত বাড়বে।
আপনার যদি উল্লিখিত কাজগুলোতে পর্যাপ্ত দক্ষতা থাকে, তবে আপনি ওমান
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কিংবা ওমান ফ্রি ভিসায় গিয়েও এই কাজগুলো করে প্রতি
মাসে ভালো পরিমাণ টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
ওমানের ভিসা বের হতে কত দিন লাগে
ওমানের ভিসা বের হওয়ার সময়সীমা বা প্রসেসিং টাইম নির্ভর করে ভিসার ধরন
এবং আপনার আবেদন প্রক্রিয়াকরণের নির্দিষ্ট সময়ের পরিস্থিতির উপর।
সাধারণত, বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ওমানের ভিসা প্রসেসিং-এর সময়কাল নিচে
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
📌আরো পড়ুন👉ওমান যেতে কত বছর বয়স লাগে
ওমানের ভিসা সাধারণত সরাসরি অনলাইনে আবেদন করা যায় না, এটি ওমানের
নিয়োগকর্তা বা স্পন্সর-এর মাধ্যমে রয়্যাল ওমান পুলিশ এর সিস্টেমে আবেদন
করতে হয়।
১. কাজের ভিসাঃ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় এই
ভিসার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয় এবং এর জন্য একটি
আনুমানিক সময় লাগে:
লেবার পারমিট ২ থেকে ৪ সপ্তাহ সময় লাগে। ভিসা আবেদনের আগে ওমানের শ্রম
মন্ত্রণালয় থেকে এই পারমিট নিতে হয়। ভিসা প্রসেসিং ২ থেকে ৪ সপ্তাহ সময়
লাগে। লেবার পারমিট পাওয়ার পরএর সিস্টেমে ভিসা আবেদন করা হয়। এটিই ভিসা
এন্ট্রি বা স্ট্যাম্পিং-এর মূল প্রক্রিয়া।
মোট প্রক্রিয়া সর্বমোট ১ থেকে ২ মাস। সব কাগজপত্র ও মেডিকেল রিপোর্ট ঠিক
থাকলে এবং সিস্টেমে কোনো জটিলতা না থাকলে।
২. অন্যান্য ভিসার সময়সীমাঃ বাংলাদেশিদের জন্য অন্যান্য ভিসার আবেদন
সাধারণত ঢাকাতে অবস্থিত ওমান দূতাবাস বা অনুমোদিত এজেন্টের মাধ্যমে জমা
দিতে হয়।
- সাধারণত ২ সপ্তাহ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
- পর্যটন বা ব্যবসায়িক ভিসা সাধারণত দ্রুত প্রক্রিয়াজাত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা সময়কে প্রভাবিত করে:
- সম্পূর্ণ ডকুমেন্টেশন: আপনার বা আপনার স্পন্সরের দেওয়া সকল কাগজপত্রে কোনো ভুল বা অসঙ্গতি থাকলে, প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হতে পারে। মেডিকেল সার্টিফিকেট অবশ্যই সত্যায়িত হতে হবে।
- নিয়োগকর্তার তৎপরতা: ভিসার জন্য সমস্ত প্রক্রিয়া নিয়োগকর্তার পক্ষ থেকে শুরু করা হয়। নিয়োগকর্তা বা এজেন্টের তাত্ক্ষণিকতা ও যোগাযোগ এর উপর অনেক কিছু নির্ভর করে।
- সরকারি ঘোষণা বা নিষেধাজ্ঞা: ওমান সরকার মাঝে মাঝে জনশক্তি আমদানির উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যা ভিসার সময়কে অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়িয়ে দেয়।
- ছুটির মৌসুম: ওমানের সরকারি ছুটি, ঈদের ছুটি বা বছরের শেষে ভিড়ের সময়-এ আবেদন করলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে।
পরামর্শ: আপনার ভিসার প্রসেসিং সময় সম্পর্কে সবচেয়ে সঠিক তথ্য আপনার
নিয়োগকর্তা বা যে রিক্রুটিং এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করছেন, তাদের কাছ
থেকে জানা সম্ভব।
ওমান দেশ কেমন
ওমান দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের একটি চমৎকার দেশ, যা তার অসাধারণ প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য, প্রাচীন সংস্কৃতি এবং শান্ত জীবনযাত্রার জন্য পরিচিত।
সংক্ষেপে, ওমান একটি শান্ত, সংরক্ষিত এবং ঐতিহ্যে ভরপুর আধুনিক দেশ।
বাংলাদেশি প্রবাসীদের দৃষ্টিকোণ থেকে ওমান কেমন, তার একটি বিস্তারিত
আলোচনা নিচে তুলে ধরা হলো:
১. নিরাপত্তা ও পরিবেশ: মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের তুলনায় ওমান
তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি শান্ত এবং নিরাপদ। এখানে অপরাধের হার অনেক কম,
ফলে প্রবাসীরা শান্তিতে বসবাস করতে পারে।
ওমানের রাজধানী মাস্কাট এবং অন্যান্য শহরগুলো খুবই পরিপাটি ও
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। পরিবেশের প্রতি এখানকার মানুষেরা যথেষ্ট সচেতন।
ওমানি জনগণ তাদের উষ্ণ আতিথেয়তা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের জন্য
সুপরিচিত। বিদেশিদের প্রতি তারা সাধারণত খুবই শ্রদ্ধাশীল।
২. সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য: ওমান দ্রুত আধুনিকায়ন হলেও তারা তাদের প্রাচীন
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে শক্তভাবে ধরে রেখেছে। উঁচু উঁচু গ্লাস টাওয়ারের
চেয়ে এখানে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলী বেশি দেখা যায়।
দেশটি কিছুটা রক্ষণশীল। তাই প্রবাসী হিসেবে আপনাকে সেখানকার রীতিনীতি,
বিশেষ করে জনসমক্ষে শালীন পোশাক পরিধান এবং বিনয়ী আচরণ বজায় রাখতে
হবে। ওমান একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও এখানে ধর্মীয় সহনশীলতা
বিদ্যমান। বিভিন্ন দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে।
৩. অর্থনীতি ও কর্মক্ষেত্র: ওমানের মুদ্রা হলো ওমানি রিয়াল (OMR), যা
বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রাগুলোর মধ্যে একটি। ওমানের অর্থনীতি
মূলত তেল ও গ্যাস এর উপর নির্ভরশীল, তবে বর্তমানে সরকার পর্যটন, খনিজ ও
শিল্পখাতে জোর দিয়ে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে।
ওমানের অর্থনীতিতে ৬ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখছেন। বিশেষ করে নির্মাণ, সার্ভিস ও শ্রম নির্ভর কাজগুলোতে
বাংলাদেশিদের চাহিদা রয়েছে। তবে বর্তমানে সরকারি 'ওমানাইজেশন' নীতির
কারণে কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
৪. প্রবাসীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা ও চ্যালেঞ্জঃ রিয়ালের মান অনেক বেশি
হওয়ায় দেশে ভালো অংকের টাকা পাঠানো সম্ভব।কিছু ক্ষেত্রে অদক্ষ
শ্রমিকদের বেতন তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে।
মানে বড় একটি বাংলাদেশি কমিউনিটি রয়েছে, ফলে আপনি প্রবাসে থেকেও সহজে
পরিচিত পরিবেশ খুঁজে পাবেন।নতুন ভিসা প্রক্রিয়া মাঝে মাঝে কঠিন হয়,
যদিও সম্প্রতি কিছু ক্যাটাগরিতে ভিসা চালু হয়েছে।
মানে সুউচ্চ পাহাড়, বিশাল মরুভূমি এবং সুন্দর সমুদ্র সৈকত রয়েছে, যা
প্রবাসীদের ছুটির দিন কাটানোর সুযোগ দেয়।আবহাওয়া গ্রীষ্মকালে অনেক গরম
ও শুষ্ক থাকে। মাস্কাট বা সালালাহর মতো বড় শহরগুলোতে প্রবাসীদের থাকার
ভালো ব্যবস্থা রয়েছে।জীবনযাত্রার মান ভালো হওয়ায় বড় শহরগুলোতে
বাসস্থানের খরচ কিছুটা বেশি।
আপনি যদি কঠোর পরিশ্রমী হন এবং শান্ত পরিবেশে কাজ করতে চান, যেখানে
আপনার সংস্কৃতিকে সম্মান করা হবে, তাহলে ওমান আপনার জন্য একটি খুব ভালো
গন্তব্য হতে পারে। তবে উচ্চ বেতনের প্রত্যাশা নিয়ে আসার আগে কাজের ধরণ
এবং চাকরির চুক্তিপত্র খুব ভালোভাবে বুঝে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন: ওমানের টাকার মান কত?
উত্তর: ১ ওমানি রিয়াল সমান প্রায় ৩১৮ বাংলাদেশি টাকা।
প্রশ্ন: ওমানে কোন পেশায় বেতন বেশি?
উত্তর: ওমানে প্রকৌশলী, ডাক্তার, এবং আইটি পেশাদারদের মতো উচ্চ
দক্ষতাসম্পন্ন পেশাগুলির বেতন সাধারণত বেশি হয়। এই পেশাদারদের মাসিক
বেতন সাধারণত ৮০০ থেকে ২,০০০ ওমানি রিয়াল পর্যন্ত হতে পারে।
প্রশ্ন: ওমানে শ্রমিকদের জন্য থাকা-খাওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়?
উত্তর: হ্যাঁ, ওমানের বেশিরভাগ শ্রমিকদের জন্য নিয়োগকর্তারা
সাধারণত থাকা, খাওয়া, এবং কর্মস্থলে পরিবহন-এর সুবিধা প্রদান করে
থাকেন।
প্রশ্ন: ওমানে ড্রাইভিং ভিসার জন্য কী কী প্রয়োজন?
উত্তর: ওমানে কাজ করার জন্য আপনার বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স, ইকামা,
এবং নিয়োগকর্তার NOC থাকা প্রয়োজন। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের
ওমান ভিসা গাইড দেখতে পারেন।
প্রশ্ন: ওমানে বেতন না পেলে কী করব?
উত্তর: যদি আপনি আপনার ন্যায্য বেতন না পান, তবে দ্রুত ওমানের
বাংলাদেশ দূতাবাসে (+968 24603514) যোগাযোগ করুন অথবা ওমানের শ্রম
মন্ত্রণালয়ে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করুন।
লেখকের শেষ মতামত
ওমানে বেতন কাঠামো মূলত পেশা, ব্যক্তিগত দক্ষতা, এবং নিয়োগকর্তার ওপর
নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। বর্তমানে ন্যূনতম মজুরি সাধারণত ২২৫ ওমানি
রিয়াল হলেও, অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মীদের জন্য বেতন এর চেয়ে অনেক বেশি হতে
পারে।
আপনি যদি ড্রাইভিং ভিসা বা দোকান ভিসায় কাজ করতে যান, তবে চুক্তির
শর্তাবলী সাবধানে পড়ুন এবং থাকা-খাওয়ার মতো অতিরিক্ত সুবিধাগুলি
নিশ্চিত করুন। ভিসা সংক্রান্ত সর্বশেষ এবং সঠিক আপডেটের জন্য আমাদের
ওমান ভিসা নিউজ দেখতে পারেন এবং ওমানে আপনার কর্মজীবন গড়তে সঠিক
পদক্ষেপ নিন।

আরিফুল প্লাস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url