বেলারুশ কাজের ভিসা ২০২৬ - প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আবেদন প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে অনেকে বেলারুশে কাজের ভিসা নিয়ে যেতে আগ্রহী। বেলারুশে বেকারত্বের হার তুলনামূলকভাবে কম হলেও, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনেক তরুণ দক্ষ কর্মী কাজের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে।
বেলারুশ কাজের ভিসা
প্রবাসীদের জন্য এই দেশটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। তাই বাংলাদেশ থেকে যারা কাজের ভিসা নিয়ে বেলারুশে যেতে আগ্রহী, তাদের বেলারুশ কাজের ভিসা প্রসেসিং, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জেনে নিতে হবে।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ

বেলারুশ কাজের ভিসা ২০২৬

বেলারুশ কাজের ভিসা হলো এমন একটি ভিসা যা আপনাকে দেশটিতে বৈধভাবে কাজ বা চাকরি করার সুযোগ দেয়। এটি মূলত 'টাইপ ডি' বা 'লং-টার্ম ওয়ার্ক ভিসা' নামে পরিচিত, যার মেয়াদ সাধারণত ৯০ দিন থেকে শুরু করে ১ বছর বা তারও বেশি হতে পারে।
এই ভিসা ওয়ার্ক পারমিটের ভিত্তিতে ইস্যু করা হয়। যারা বেলারুশে কাজ করতে আগ্রহী, তাদের জন্য এই ভিসা প্রয়োজন। বেলারুশে কাজের ভিসা পেতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই সেখানে কোনো বৈধ কোম্পানি থেকে অফার লেটার বা কাজের কন্ট্রাক্ট সংগ্রহ করতে হবে।

তবে, এ ধরনের অফার লেটার পাওয়া সহজ কাজ নয়। যদি বেলারুশে আপনার পরিচিত কেউ থাকে, তাহলে তাদের মাধ্যমে কোনো নিয়োগকর্তার কাছ থেকে কাজের কন্ট্রাক্ট বা অফার লেটার সংগ্রহ করা যেতে পারে। যারা ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছেন, শুধুমাত্র তারাই বেলারুশে কাজের জন্য যেতে পারবেন।

এছাড়াও, কাজের ভিসা তাদের জন্যই যারা বৈধভাবে সেখানে থাকতে ও কাজ করতে ইচ্ছুক। বেলারুশ একটি উন্নয়নশীল ইউরোপীয় দেশ হওয়ায় সেখানে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। তাই আপনি চাইলে সতর্কতা অবলম্বন করে, সঠিক নিয়ম মেনে কাজের জন্য যেতে পারেন এবং ভালো আয় ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।

যারা বেলারুশ যাওয়ার জন্য ভিসা করতে চান, তারা বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত এজেন্সি খুঁজে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে কাজের অফার পেলে, চুক্তিপত্র ভালোভাবে পড়ে ও বুঝে নিয়ে তবেই ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।

বেলারুশে পৌঁছানোর পর প্রথমে অভিবাসন অফিসে রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক; ভুলে গেলে জরিমানা হতে পারে। বেলারুশ কাজের ভিসা সম্পর্কে জানার জন্য অধিকাংশ মানুষই গুগলে সার্চ করেন। তাই আপনাদের জানার সুবিধার্থে, এই লেখাটির মাধ্যমে বেলারুশ কাজের ভিসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জেনে নিতে পারেন।

বর্তমানে বেলারুশে বিভিন্ন ক্যাটাগরির কাজের ভিসা পাওয়া যায়। তবে ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী বেতনের ভিন্নতা দেখা যায়। আপনার কাজের ওপর যদি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে তুলনামূলকভাবে বেতনের পরিমাণ বেশি হবে।
  • বেলারুশ কাজের ভিসার সর্বনিম্ন মূল্য প্রায় ৪ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
  • অন্যদিকে, এই ভিসার সর্বোচ্চ মূল্য প্রায় ৬ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তবে বেলারুশের কাজের ভিসার দাম ক্ষেত্রবিশেষে এবং সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হতে পারে বা কম-বেশি হতে পারে। কারণ, সরকারি ও বেসরকারিভাবে বেলারুশ যাওয়ার জন্য খরচের তারতম্য থাকে। সরকারিভাবে গেলে খরচের পরিমাণ কম হবে, কিন্তু বেসরকারি কোনো এজেন্সির মাধ্যমে গেলে খরচের পরিমাণ বেশি হতে পারে।

তবে ভিসা করার আগে অবশ্যই ভিসার দাম এবং বেতনের হার কেমন, সে সম্পর্কে ভালোভাবে বিস্তারিত জেনে যাওয়া উচিত।

বেলারুশে কাজের ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

বেলারুশে কাজের ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের কাজ করতে সেখানে যেতে ইচ্ছুক তার ওপর। অর্থাৎ পেশা বা কাজের ধরনের ওপর অভিজ্ঞতা নির্ভর করে। কারণ দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের কাজের ধরন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। 
বেলারুশে কাজের ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা
যেমন, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, কার্পেন্টার, গাড়ি মেকানিক, নার্স, আইটি এ ধরনের কাজগুলোর ক্ষেত্রে কিছুটা অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছে। 

বেলারুশ সরকার এই ধরনের কাজের ক্ষেত্রে অনেক সময় ২ থেকে ৫ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা চাইতে পারে। প্রমাণস্বরূপ, এই কাজগুলোর সার্টিফিকেট, কাজের রেফারেন্স বা কোম্পানির সুনামির চিঠি চাওয়া হতে পারে। আইটি বা নার্সিংয়ের ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা বা ট্রেনিং সনদ থাকলে তা সহায়ক হয়। 

কারণ এই ধরনের কাজগুলোর জন্য অভিজ্ঞতা থাকলে তারা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীকেই বেছে নেবে বা তাদের প্রাধান্য দেবে। তাই যারা এই ধরনের কাজগুলোতে যেতে চান, তারা অবশ্যই এই কাজগুলোর একটি সনদ নিজের কাছে সুরক্ষিত রাখবেন। 

তবে যারা অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে অভিজ্ঞতা ছাড়াই বেলারুশে কাজের জন্য যেতে চান, তারা মূলত কৃষিকাজ, খামারি সহকারী, ক্লিনার, হাউজকিপিং, প্যাকেজিং, ফ্যাক্টরির হেল্পার, ওয়্যারহাউজের মতো কাজগুলো করার জন্য যেতে পারেন।

এ ধরনের কাজগুলোতে অনেক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ছাড়াই সুযোগ দেওয়া হয়। তবে, যাদের পূর্বে অভিজ্ঞতা এবং ট্রেনিং রয়েছে, তাদের ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

বেলারুশ কাজের ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

বেলারুশ কাজের ভিসা পেতে নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রয়োজন:
  • বৈধ পাসপোর্ট: ন্যূনতম ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে।
  • কাজের প্রস্তাবপত্র: বেলারুশের কোনো কোম্পানি থেকে জব অফার।
  • চুক্তিপত্র: নিয়োগকর্তার সাথে স্বাক্ষরিত কাজের চুক্তি।
  • ইনভাইটেশন লেটার: কোম্পানি থেকে প্রদত্ত আমন্ত্রণপত্র।
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি: ৩-৪ কপি সাম্প্রতিক ছবি।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ: প্রয়োজনীয় কাজের ধরন অনুযায়ী।
  • মেডিকেল সার্টিফিকেট: স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রমাণ।
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি: বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে পরিচয় প্রমাণ।
  • ভিসা আবেদন ফর্ম: সঠিকভাবে পূরণকৃত।
এই কাগজপত্র সংগ্রহ করার পর নিকটবর্তী যা ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত বেলারুশ দূতাবাসে আবেদন জমা দিতে হবে।

বেলারুশ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

আপনি যদি কাজের উদ্দেশ্যে বেলারুশে যেতে চান, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বেলারুশ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করতে হবে। এই ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
প্রতি বছর এই দেশ প্রচুর সংখ্যক লোক নিয়োগ দিয়ে থাকে, বিশেষ করে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায়। কারণ, বিভিন্ন কোম্পানির কাজের জন্য শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। তাই কাজের উদ্দেশ্যে বেলারুশে যেতে চাইলে আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিতে হবে।

বেলারুশে কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় গেলে আপনার খরচ অনেকটাই কমানো সম্ভব, যদি আপনি সরাসরি বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এর জন্য বেলারুশের সরকারি ওয়েবসাইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো দেখা যেতে পারে এবং সেখান থেকে কোম্পানির মালিকদের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

আপনার সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে এবং কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে কোম্পানিগুলো আপনাকে নিয়োগ দিতে পারে। এই ভিসায় আপনি ফ্যাক্টরি, হোটেল, গার্মেন্টস বা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন। সরাসরি যোগাযোগ করে ভিসা করলে খরচ হতে পারে প্রায় ৫ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকা।

তবে, আপনি যদি কোনো এজেন্সি বা দালালের মাধ্যমে যেতে চান, সেক্ষেত্রে খরচ বেড়ে ১০ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই ভিসায় কাজ পেলে মাসে সর্বনিম্ন বেতন প্রায় ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়ের সুযোগ রয়েছে।

বেলারুশে যেসব ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া যায় সেগুলো হলঃ
  • ফ্যাক্টরি বা কারখানা শ্রমিক
  • কনস্ট্রাকশন ও ওয়েল্ডিং
  • মেকানিক ইলেকট্রিশিয়ান
  • হাউসকিপিং ও ক্লিনার
  • ড্রাইভার
  • হোটেল সহকারী , সেফ হেল্পার
  • কৃষি , ফুড ডেলিভারি
তবে যেকোনো কাজে সফলভাবে টিকে থাকতে হলে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অপরিহার্য। বেলারুশে কাজের ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কাদের জন্য উপযুক্ত, তা নিচে আলোচনা করা হলো:
  • যাদের হাতে-কলমে বা টেকনিক্যাল কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে।
  • যারা নতুন ভাষা শিখে সেখানকার পরিবেশের সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে সক্ষম।
  • যারা ইউরোপের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ জেনেও সেখানে চাকরি করতে আগ্রহী।
  • যারা কিছু ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত।
  • যারা বেলারুশে স্থায়ীভাবে বসবাস বা ভবিষ্যতে ব্যবসা করার ইচ্ছা রাখেন।
  • তাদের জন্য বেলারুশ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা হতে পারে একটি বাস্তবসম্মত এবং লাভজনক সিদ্ধান্ত।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রক্রিয়া শুরুর আগে কিছু বিষয় নিশ্চিত করা জরুরিঃ
  • সম্ভব হলে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির মাধ্যমে বেলারুশ ওয়ার্ক পারমিট ভিসাটি ভালো করে যাচাই করে নিন। 
  • পাসপোর্ট জমা দেওয়ার আগে সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্ক্যান করে নিজের কাছে রাখুন। 
  • চাকরির চুক্তিপত্র ভালোভাবে পড়ে, বুঝে তারপর স্বাক্ষর করুন।
বর্তমানে বেলারুশ প্রবাসীদের কাজের জন্য নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করছে। বেলারুশে কাজের ভিসার বেতন কাঠামো জেনে নিয়ে আপনি আপনার ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন।

বেলারুশ কাজের ভিসা পাওয়ার নিয়ম

বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে বেলারুশে কাজের ভিসা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে বেসরকারি ভাবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে আপনি এই দেশে যেতে পারবেন। বেলারুশের কাজের ভিসা পেতে কিছু সুনির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
প্রথমত, বেলারুশের কোনো কোম্পানি থেকে কাজের প্রস্তাব পেতে হবে। এই প্রস্তাব পাওয়ার পর সেই কোম্পানির কাছ থেকে কাজের চুক্তিপত্র এবং আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হাতে পেলে আপনি নিজেই বেলারুশ কাজের ভিসার প্রসেসিং শুরু করতে পারবেন।

তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে বেলারুশের কোনো দূতাবাস নেই। এই কারণে, আপনাকে বিশ্বস্ত কোনো এজেন্সির সহায়তায় ভারতে গিয়ে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রসেসিং সম্পন্ন করতে হবে। ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করে নিকটবর্তী (সাধারণত ভারতে অবস্থিত) বেলারুশ দূতাবাসে গিয়ে ভিসার আবেদন জমা দিতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
  • পাসপোর্ট
  • ভিসা আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • ভোটার আইডি কার্ড
  • জব অফার লেটার
  • কাজের চুক্তিপত্র
  • পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট
  • মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
  • স্কিল সার্টিফিকেট
  • ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট
  • স্বাস্থ্য বীমা

বেলারুশ কাজের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া

বেলারুশের কাজের ভিসার জন্য নিচে উল্লিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:
  • জব অফার সংগ্রহ: প্রথমে বেলারুশের কোনো কোম্পানি থেকে কাজের প্রস্তাব নিতে হবে। এই কাজ সাধারণত কৃষি, নির্মাণ, হোটেল বা ফ্যাক্টরি সংশ্লিষ্ট হতে পারে।
  • কাগজপত্র প্রস্তুত: কাজের চুক্তিপত্র ও আমন্ত্রণপত্রসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করুন।
  • দূতাবাসে আবেদন: যেহেতু বাংলাদেশে বেলারুশের কোনো দূতাবাস নেই, তাই আপনাকে ভারতে অবস্থিত বেলারুশ দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন জমা দিতে হবে। সাধারণত, এটি নয়াদিল্লিতে (দিল্লি) অবস্থিত।
  • বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান: আবেদন প্রক্রিয়া চলাকালীন আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য, যেমন— আঙুলের ছাপ এবং ছবি প্রদান করতে হবে।
  • ভিসা ফি পরিশোধ: ভিসার ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে। এই ফি সাধারণত $50 থেকে $100 এর মধ্যে হয়ে থাকে।

বেলারুশ ভিসা অনলাইন আবেদন

বর্তমানে বেলারুশের ভিসার জন্য সম্পূর্ণ অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া চালু হয়নি। তবে, আবেদনকারী ফর্মটি ডাউনলোড করে তা পূরণ করতে পারেন এবং পরে সেটি দূতাবাসে জমা দিতে হয়। ভবিষ্যতে বেলারুশ সরকার যদি ই-ভিসা সুবিধা চালু করে, তবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বেলারুশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (https://mfa.gov.by/en/) থেকে জানা যাবে।

বেলারুশে কাজের ভিসা প্রসেসিং টাইম

বেলারুশে কাজের ভিসা প্রসেসিং সময় কয়েকটি প্রধান ধাপের ওপর নির্ভর করে। শুরুতে কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করতে হয়। এরপরে প্রয়োজন হয় Type D ওয়ার্ক ভিসার। যদি সব কাগজপত্র ঠিক থাকে এবং আবেদন প্রক্রিয়ায় কোনো জটিলতা না থাকে, তবে সাধারণত ১ থেকে ২ মাস সময় লাগতে পারে।

তবে, কিছু নির্দিষ্ট কারণে এই সময়সীমা বাড়তে পারে। যেমন:
  • ডকুমেন্ট বা নথিপত্র অসম্পূর্ণ থাকলে।
  • নিয়োগকারী কোম্পানি যদি দেরিতে আবেদন করে।
  • দূতাবাসের ভিসা প্রক্রিয়াকরণে কোনো জটিলতা থাকলে।
  • নির্দিষ্ট মৌসুমে ভিসার আবেদন চাপ বেশি থাকলে।
এছাড়া, সরকারিভাবে বেলারুশে ভিসার জন্য আবেদন করলে প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ হতে পারে, সেক্ষেত্রে ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। অন্যদিকে, বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করলে সময় তুলনামূলকভাবে কম লাগলেও খরচ বা টাকা বেশি লাগে।

বেলারুশ কাজের ভিসার মেয়াদ কত দিন থাকে?

বেলারুশে কাজের ক্ষেত্রে আপনি যদি সরকারি এজেন্সির মাধ্যমে যান, তবে ভিসার মেয়াদ সাধারণত ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। তবে, এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হয়।

আপনি যে কোম্পানির মাধ্যমে যাচ্ছেন, তাদের নিয়ম অনুযায়ী যদি কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত থাকে, তবে সেই সময় পর্যন্ত বেলারুশে অবস্থান করা আবশ্যক। পরবর্তীতে আপনাকে দেশে ফিরে আসতে হতে পারে। তাই, কাজের ভিসার মেয়াদ কত দিনের জন্য নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে কোম্পানির কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে নেওয়া উচিত।

বেলারুশ স্টুডেন্ট ভিসা ২০২৬

আপনি যদি বেলারুশে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যেতে চান, তবে আপনাকে স্টুডেন্ট ভিসা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার ভিসা বাবদ খরচ হতে পারে ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকার মতো। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ফি, থাকা-খাওয়া এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচগুলো আপনাকে আলাদাভাবে বহন করতে হবে।
তবে বেলারুশে আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি দিনে দুই ঘণ্টা এবং সপ্তাহে দুই দিন কাজ করার সুযোগ পাবেন। এই কাজের মাধ্যমে আপনি আপনার থাকা-খাওয়ার খরচ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু খরচ বহন করতে সক্ষম হতে পারেন। পড়াশোনার পাশাপাশি দিনে দুই ঘণ্টা কাজ করলে আপনি মাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মতো আয় করতে পারবেন।

তবে স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে হলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট নথিপত্র বা ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। এখন সেই বিষয়ে আলোচনা করা যাক।
  • টিউশন ফি: প্রথম বছরের পড়াশোনার জন্য টিউশন ফি প্রদান করতে হবে।
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা: স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
  • পাসপোর্ট: একজন বাংলাদেশী হিসেবে কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদসহ বৈধ পাসপোর্ট লাগবে।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা: আপনার অর্জিত সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র: জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিতে হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পত্র: যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আবেদনের পর প্রাপ্ত অনুমোদন পত্র লাগবে।
  • আগমন ভিসার জন্য বোর্ডের চিঠি: এছাড়াও, আবেদন করার সময় বেলারুশে আপনার আগমনের ভিসার জন্য বোর্ডের একটি চিঠি প্রয়োজন হবে।
সুতরাং, আপনি যদি বেলারুশে পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তবে আপনাকে উপরে উল্লেখিত কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করতে হবে। এরপর সঠিকভাবে আবেদনপত্র পূরণ করে এই সকল নথিপত্র দূতাবাসে (এম্বাসিতে) জমা দিতে হবে।

বেলারুশ টুরিস্ট ভিসা ২০২৬

বাংলাদেশী নাগরিকদের স্বল্প-মেয়াদী বেলারুশ ভ্রমণের জন্য টুরিস্ট ভিসা উপযুক্ত। এই ভিসার মেয়াদ সাধারণত এক (১) মাস হয়ে থাকে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
  • বৈধ পাসপোর্ট।
  • হোটেল রিজার্ভেশন।
  • ভ্রমণের সময়কালের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের প্রমাণ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট)।
  • ভ্রমণ পরিকল্পনা।
টুরিস্ট ভিসা প্রসেসিংয়ে ৭-১৫ দিন সময় লাগতে পারে।

বেলারুশে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়

বেলারুশের নাগরিকত্ব পাওয়ার কয়েকটি প্রধান উপায় আছে, তবে এটি সাধারণত একটি দীর্ঘ এবং শর্তসাপেক্ষ প্রক্রিয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনাকে প্রথমে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি নিতে হবে এবং তারপর নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করতে হবে।

মানুষের মতো করে বেলারুশের নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রধান উপায়গুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. প্রাকৃতিকীকরণ এর মাধ্যমেঃ বেলারুশের নাগরিকত্ব পাওয়ার এটিই সাধারণ পথ। এর জন্য আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করতে হবে:
  • আপনাকে বৈধভাবে বেলারুশে একটানা ৭ বছর স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে। তবে, এই ৭ বছরের মধ্যে বছরে সর্বোচ্চ ৩ মাসের বেশি দেশের বাইরে থাকা যাবে না।
  • আপনার অবশ্যই একটি বৈধ ও নিয়মিত আয়ের উৎস থাকতে হবে।
  • বেলারুশের যেকোনো একটি রাষ্ট্রীয় ভাষা ভালোভাবে বলতে পারার সক্ষমতা থাকতে হবে।
  • আপনাকে বেলারুশের সংবিধান এবং আইন মেনে চলার অঙ্গীকার করতে হবে।
  • বেলারুশ সাধারণত দ্বৈত নাগরিকত্বকে স্বীকৃতি দেয় না। তাই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার সময় আপনাকে অন্য দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হবে বা ত্যাগ করার প্রমাণ দিতে হবে।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে এই ৭ বছরের সময়সীমা কম হতে পারে, যেমন:

আপনি যদি কোনো বেলারুশের নাগরিককে কমপক্ষে ৩ বছর ধরে বিবাহ করে থাকেন এবং আপনার অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান বেলারুশের নাগরিক হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে সরলীকৃত প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যেতে পারে।

এছাড়া বেলারুশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ শিক্ষা শেষ করে সেখানে কমপক্ষে ৩ বছর বৈধভাবে কাজ করলে সরলীকৃত প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়।

২. জন্মসূত্রে নাগরিকত্বঃ যদি কোনো শিশুর বাবা-মা দুজনেই বেলারুশের নাগরিক হন, তবে সে যেখানেই জন্মাক না কেন, বেলারুশের নাগরিক হবে।চ যদি বাবা-মায়ের মধ্যে অন্তত একজন বেলারুশের নাগরিক হন, তবুও শিশুটি বেলারুশের নাগরিকত্ব পাবে।

যদি বাবা-মা উভয়ই রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি হন এবং শিশুটির জন্ম বেলারুশের মাটিতে হয়, তবে শিশুটি বেলারুশের নাগরিকত্ব পাবে।

৩. নিবন্ধনের মাধ্যমেঃ এই প্রক্রিয়াটি সবার জন্য নয়, কিছু নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক বা পারিবারিক সংযোগ আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য:

যারা সোভিয়েত ইউনিয়নের নাগরিক ছিলেন এবং ১৯৯১ সালের ১২ নভেম্বরের আগে বেলারুশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বা স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন, তারা এবং তাদের সোভিয়েত নাগরিক স্বামী/স্ত্রী ও বংশধররা নিবন্ধনের মাধ্যমে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন।

বেলারুশের কোনো নাগরিকের সন্তান বা দত্তক নেওয়া সন্তানও এই পদ্ধতিতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারে।

৪. বিশেষ যোগ্যতার কারণেঃ যদি কেউ বেলারুশের জন্য বিশেষ কোনো অবদান রাখেন বা রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হন, যেমন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি বা ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অর্জন, তবে সরকার বিশেষ বিবেচনায় নাগরিকত্ব দিতে পারে।

নাগরিকত্বের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সময় লাগতে পারে। আপনি বেলারুশে আছেন নাকি দেশের বাইরে থেকে আবেদন করছেন, তার উপর ভিত্তি করে আবেদনের স্থান এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিন্ন হতে পারে।

আবেদন করার আগে বেলারুশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন বিভাগ অথবা নিকটস্থ বেলারুশ দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করে আপনার জন্য প্রযোজ্য সঠিক নিয়মগুলো জেনে নেওয়া সবচেয়ে ভালো। মনে রাখবেন, নিয়ম-কানুন সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে।

সাধারুন প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)

প্রশ্ন: বেলারুশ কাজের ভিসা কতদিন সময় লাগে?
উত্তর: আপনার কাগজপত্র বা ভিসা আবেদন যদি নির্ভুল হয়, তবে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগতে পারে।

প্রশ্ন: বেলারুশ ভিসার মেয়াদ কতদিন?
উত্তর: সাধারণত ভিসার মেয়াদ ৯০ দিন থেকে শুরু করে ১ বছর পর্যন্ত হতে পারে। তবে চুক্তি অনুসারে এটি আবার বাড়িয়ে নেওয়াও সম্ভব।

প্রশ্ন: বেলারুশ ভিসা প্রসেসিং হতে কত দিন সময় লাগে?
উত্তর: সরকারি প্রক্রিয়ায় ভিসা পেতে চাইলে সাধারণত ৩ থেকে ৫ মাস সময় লাগে। অন্যদিকে, বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে গেলে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যেই ভিসা প্রসেসিং সম্পন্ন করা সম্ভব।

প্রশ্ন: বেলারুশ কি সেনজেন দেশ?
উত্তর: না, বেলারুশ সেনজেন এলাকার অন্তর্ভুক্ত নয়। দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়, ফলে এখানে সেনজেন ভিসার সুবিধা প্রযোজ্য হয় না। তবে, বেলারুশের ভিসা নীতি তুলনামূলকভাবে সহজ। বাংলাদেশী নাগরিকরা সঠিক কাগজপত্র জমা দিয়ে এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে কি বেলারুশ দূতাবাস আছে?
উত্তর: বাংলাদেশে বেলারুশের কোনো দূতাবাস নেই। এই কারণে যোগাযোগের জন্য নিকটতম দূতাবাসটি ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত।
  • ঠিকানা: Embassy of Belarus, 163, Jor Bagh, New Delhi, India.
  • ওয়েবসাইট: https://india.mfa.gov.by/en/

লেখকের শেষ মতামত

বর্তমানে বেলারুশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ায় দেশটির উন্নয়ন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবে এটি বাংলাদেশের চেয়ে একটি উন্নত দেশ। এই পরিস্থিতিতে, বেলারুশে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করার সময় পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য এজেন্সির সাহায্য নেওয়া উচিত, যাতে ভিসা তৈরির প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের প্রতারণার শিকার হতে না হয়। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরিফুল প্লাস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url