সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত ২০২৬ (আপডেট তথ্য)

মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমির দেশ সৌদি আরবে অনেক বৃহৎ কোম্পানি রয়েছে। অনেকেই এসব কোম্পানিতে চাকরি করতে আগ্রহী হন, যে কারণে ইন্টারনেটে তারা 'সৌদি আরবের কোম্পানি বেতন কত' লিখে প্রায়ই অনুসন্ধান করে থাকেন।
সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত
সৌদি সরকার প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের সাথে চুক্তি করে শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে। শ্রমিক হিসেবে কোম্পানিতে কাজ করার জন্য সাধারণত সৌদি আরব কোম্পানি ভিসার প্রয়োজন হয়। এই কোম্পানি ভিসার অধীনে বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সাধারণত বেশি হয়ে থাকে।

কোম্পানি ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে যেতে আগ্রহীদের জন্য সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার বেতন সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরি। এর পাশাপাশি, ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ভিসা পাওয়ার নিয়ম এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও যথাযথ জ্ঞান রাখা আবশ্যক।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা কী?

কোম্পানি ভিসা হলো এক ধরনের ওয়ার্ক ভিসা যা একজন কর্মীকে সৌদি আরবের কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে কাজ করার অনুমতি প্রদান করে।

এই ভিসা পেতে হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই সৌদি আরবের কোনো কোম্পানি থেকে চাকরির প্রস্তাব বা 'অফার লেটার' অর্জন করতে হবে। এটি সাধারণত একটি দীর্ঘমেয়াদী ভিসা, যা কর্মীকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সৌদি আরবে কাজ করার এবং বসবাস করার সুযোগ দেয়।

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত

সৌদি আরব হলো মধ্যপ্রাচ্যের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। ২,১৫০,০০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দিক থেকে এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং আলজেরিয়ার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। সৌদি আরবে কোম্পানি ভিসার বেতন বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হয়।
সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসাগুলোর বেতন কত হবে, তা অনেকটাই কাজের ধরন ও পদের ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, আপনি ঠিক কী ধরনের কাজের জন্য ভিসার আবেদন করেছেন এবং কোন পদের জন্য ভিসা পেয়েছেন, তা বিবেচনায় আনতে হবে।

বেতন ভিন্ন হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কাজের ধরন, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ওভারটাইমের মতো বিষয়গুলো। তাই, বাংলাদেশ থেকে যারা কোম্পানি ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে যেতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার বেতন সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বেতনের সাধারণ ধারণা: সৌদি আরবে একজন সাধারণ শ্রমিক প্রতি মাসে প্রায় ৩০,০০০ টাকা থেকে ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারে। তবে প্রবাসী শ্রমিকদের বেতন তুলনামূলকভাবে কম হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, তাদের ন্যূনতম বেতন প্রায় ৩৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

বিভিন্ন পেশার সম্ভাব্য বেতন:
  • অ্যাকাউন্ট্যান্ট: জুনিয়রদের বেতন SAR ৭,০০০ থেকে SAR ১১,০০০ এবং সিনিয়রদের বেতন SAR ১৮,০০০ থেকে SAR ৩০,০০০ বা তার বেশি
  • আইটি স্পেশালিস্ট জুনিয়রদের বেতন SAR ৮,০০০ থেকে SAR ১৩,০০০ এবং সিনিয়রদের বেতন SAR ২২,০০০ থেকে SAR ৪০,০০০ বা তার বেশি
  • ইঞ্জিনিয়ার: জুনিয়রদের বেতন SAR ৯,০০০ থেকে SAR ১৫,০০০ এবং সিনিয়রদের বেতন SAR ২৫,০০০ থেকে SAR ৫০,০০০ বা তার বেশি
  • অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট: SAR ৫,০০০ – SAR ৮,০০০
  • ড্রাইভার: গড় SAR ৩,১১৫
  • ক্লিনার/শ্রমিক: SAR ২,৪০০ – SAR ৩,৬০০ এর মধ্যে হতে পারে।
  • হোটেল কর্মী: ন্যূনতম SAR ১,৩০০ (সাথে ওভারটাইম থাকলে বাড়বে)।
  • ইলেকট্রিশিয়ান: ন্যূনতম SAR ১,৩৫০।
সৌদি আরবে সৌদি নাগরিকদের জন্য বেসরকারি খাতে ন্যূনতম মাসিক মজুরি ৪,০০০ সৌদি রিয়াল নির্ধারিত রয়েছে। তবে প্রবাসী কর্মীদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নেই; তাদের বেতন সাধারণত চুক্তির মাধ্যমেই নির্ধারিত হয়।

তবে অনেক কোম্পানি বেতনের পাশাপাশি আবাসন ভাতা, যাতায়াত ভাতা, বার্ষিক বোনাস ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করে, যা কর্মীদের মোট উপার্জন বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু 'সাপ্লাই কোম্পানি' বা 'ফ্রি ভিসা'র নামে অনেক সময় শ্রমিকরা প্রতারণার শিকার হন। সেক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ বা বেতন না পাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাই সরাসরি ভালো কোম্পানির ভিসার জন্য চেষ্টা করা উচিত।

সৌদি আরবের কোম্পানিতে শ্রমিকদের বেতন কত

বর্তমানে সৌদি আরবের কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে চাকরি পাওয়া তুলনামূলক সহজ, কারণ শ্রমিক হিসেবে কোম্পানি ভিসার জন্য আবেদন করলে সহজে ভিসা পাওয়া যায়।

বর্তমানে সৌদি আরবের কোম্পানিতে কর্মরত একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন বেতন প্রায় ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

তবে কাজের দক্ষতা থাকলে বেতন বেশি হয়। সৌদি আরবের কোম্পানিতে অভিজ্ঞ শ্রমিকদের ন্যূনতম প্রায় ৮০ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন প্রদান করা হয়ে থাকে।

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা কত টাকা

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার চাহিদা বর্তমানে অনেক বেশি, বিশেষ করে বাংলাদেশে। এর প্রধান কারণ হলো এই ভিসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ধরনের সুবিধা। 
সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা কত টাকা
শোনা যায়, কোম্পানি ভিসা নিয়ে যেকোনো ধরনের কাজ করা সম্ভব, যা এই ভিসাকে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
কোম্পানি ভিসার সুযোগ-সুবিধা বেশি হওয়ার কারণেই এর চাহিদা এত বেশি। তবে, সৌদি আরবে পৌঁছানোর জন্য মাধ্যম বা এজেন্টের ওপর ভিত্তি করে এই ভিসার খরচ পরিবর্তিত হতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে কোম্পানি ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে যেতে সাধারণত ৪ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। এই ভিসা নিয়ে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় মাধ্যমেই যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদি সরকারিভাবে কোম্পানি ভিসাতে যাওয়ার সুযোগ মেলে, তবে খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়।

তবে, বেসরকারিভাবে বা কোনো এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করলে খরচ সাধারণত বেশি হয়। যদি কোনো পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়, তবে খরচ কিছুটা সাশ্রয় করা সম্ভব হতে পারে। সুযোগ পেলে সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো মাধ্যমেই ভিসা নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা পেতে কি কি লাগে

যারা কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যেতে আগ্রহী, তাদের জন্য সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার বেতন কত হতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি, কোম্পানি ভিসা পাওয়ার নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং খরচ সম্পর্কেও বিস্তারিত জানা জরুরি।

বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমেই কোম্পানি ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে কাজের জন্য যাওয়া যায়। এই ভিসায় সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে বেশি পাওয়া যায়।

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসায় বেতন কত, তা জানা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি এই ভিসা পাওয়ার জন্য কী কী কাগজপত্র তৈরি করতে হবে, সেটাও জানা খুব দরকারি। কোম্পানি ভিসা পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ
  • বৈধ পাসপোর্ট
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • জাতীয় পরিচয় পত্র
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট (যদি লাগে)
  • কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট
  • কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট

সৌদি আরব কোম্পানি ভিসা পাওয়ার নিয়ম

সৌদি আরবে কোম্পানি ভিসার বেতন কত, তা জানার পাশাপাশি এর পাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেও আপনার অবশ্যই জানা প্রয়োজন। এই কোম্পানি ভিসা এমন একটি ভিসা যা দিয়ে আপনি পরিছন্নতা কর্মী, কনস্ট্রাকশন শ্রমিক, ফ্যাক্টরি শ্রমিক, ড্রাইভিং, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে বোয়েসেলের মাধ্যমে সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা নিয়ে যাওয়া যায়। বোয়েসেলের মাধ্যমে সরকারিভাবে যেতে চাইলে আপনাকে নিয়মিত তাদের অ্যাকাউন্ট তৈরি করে আপডেট থাকতে হবে। যখনই কোনো সার্কুলার প্রকাশিত হবে, তখনই আপনাকে আবেদন করতে হবে।

তবে আপনি চাইলে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বা পরিচিত লোকজনের সহায়তায়ও সৌদি আরবে কোম্পানির ভিসা নিয়ে যেতে পারবেন। তবে বেসরকারিভাবে গেলে খরচ সাধারণত একটু বেশি হয়ে থাকে।

সৌদি আরবে কোম্পানি ভিসা চেক

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা করার আগে আপনাকে সব সময় সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। কারণ অনেক সময় দেখা যায় যে ভিসা করতে গিয়ে প্রতারণার ফাঁদে পড়তে হয়।  
সৌদি আরবে কোম্পানি ভিসা চেক
তাই, বিশ্বস্ত এজেন্সির মাধ্যমে অথবা পরিচিত কেউ যদি সৌদি আরবে থেকে থাকে, তার মাধ্যমেও আপনি ভিসার কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। এতে করে আপনার কাজটি সঠিকভাবে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

কারণ কিছু দালাল আছে যারা কোম্পানির ভিসা করে দেওয়ার নাম করে অন্য ভিসা করে দেয়। এতে করে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাই সচেতনশীল হিসেবে আপনার সৌদি আরবে যাওয়ার আগে ভিসা চেক করে নেওয়া উচিত। সেজন্যই অনেকে অনলাইনে সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা কিভাবে চেক করতে হয়, সেই নিয়মটি জানতে চায়।

অনলাইনে ভিসা চেক করার জন্য প্রথমে আপনাকে গুগল ক্রোমে যেতে হবে। এরপর 'Saudi arabia visa check' লিখে সার্চ করতে হবে। ক্যাপচা এলে তা পূরণ করতে হবে। অ্যাপ্লিকেশন আইডি ও পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে সবশেষে 'চেক স্ট্যাটাস' (Check Status) এ ক্লিক করলেই আপনি আপনার কোম্পানির ভিসা দেখতে পারবেন।

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া

কোম্পানি ভিসার জন্য আবেদন করা কিছুটা জটিল মনে হতে পারে, তবে সঠিক তথ্য এবং পদক্ষেপ অনুসরণ করলে প্রক্রিয়াটি সহজ হয়ে যায়।
আবেদনের পূর্ব প্রস্তুতিঃ প্রথমত, আপনাকে একটি ভালো কোম্পানি খুঁজে বের করতে হবে, যেখানে আপনার কাজের সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন অনলাইন জব পোর্টাল এবং রিক্রুটিং এজেন্সির সাহায্য নিতে পারেন।

কোম্পানি কর্তৃক একটি অফার লেটার বা চুক্তিপত্র পেতে হবে। এই চুক্তিপত্রে আপনার বেতন, কাজের শর্তাবলী এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। আপনার পাসপোর্ট, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, অভিজ্ঞতার সনদ, মেডিকেল রিপোর্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে।

আবেদনের ধাপসমূহ
  • অনলাইন আবেদন: সৌদি আরবের ভিসা পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
  • কাগজপত্র দাখিল: আপনার সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিসা সেন্টারে জমা দিতে হবে।
  • মেডিকেল পরীক্ষা: অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
  • ফি পরিশোধ: ভিসার জন্য নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে।
  • ভিসা গ্রহণ: সবকিছু ঠিক থাকলে, আপনার ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আপনি সেটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস
  • ভিসা আবেদনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস-এর প্রয়োজন হবে, যা নিচে উল্লেখ করা হলো:
  • বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে)
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • অফার লেটার বা চুক্তিপত্র
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও অভিজ্ঞতার সনদ
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট
  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র
  • কোম্পানির registration certificate

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা পাওয়ার উপায়

সৌদি আরবে একজন কোম্পানি শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারবেন। যেমন: ক্লিনার, কনস্ট্রাকশন, প্রোডাকশন, মেশিন অপারেটর, ড্রাইভিং, ইলেকট্রনিক ইত্যাদি।

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা পাওয়ার জন্য কেএসএ ভিসা ওয়েবসাইটে ভিজিট করে কোম্পানি ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। কোম্পানি ভিসা আবেদন করার জন্য ভিসা ক্যাটাগরি হিসেবে 'ওয়ার্ক পারমিট ভিসা' সিলেক্ট করতে হয়।

কোম্পানি ভিসা আবেদন করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লাগে। প্রয়োজনীয় তথ্য, কাগজপত্র ও ভিসা ফি অনলাইনে জমা দিয়ে কোম্পানি ভিসার জন্য আবেদন করা যায়।

সরকারিভাবে বোয়েসেলের মাধ্যমে কোম্পানি ভিসা প্রসেসিং করে সৌদি আরবে যাওয়া যায়। এর জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বোয়েসেলের ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিয়মিত নজর রাখতে হবে। সৌদি আরব কোম্পানি ভিসার সার্কুলার প্রকাশ পেলে আবেদন করতে হয়।

কেউ চাইলে বিশ্বস্ত কোনো এজেন্সি, পরিচিত ব্যক্তি কিংবা দালালের মাধ্যমেও কোম্পানি ভিসা প্রসেসিং করতে পারে। এছাড়া, সৌদি আরবের দূতাবাসে গিয়ে নিজে নিজেও সৌদি আরবের যেকোনো ধরনের ভিসা প্রসেসিং করা সম্ভব।

সৌদি আরবের আরামকো কোম্পানি ভিসা

অনেকেই সৌদি আরবে বিভিন্ন ভিসার জন্য আবেদন করেন। সেখানে কাজের ধরন অনুযায়ী বেতনের পার্থক্য দেখা যায়। প্রতি বছর সৌদি আরবের বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে আরামকো বেশ কিছু শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে। এই কারণে অনেক বাংলাদেশিই আরামকো কোম্পানিতে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করে থাকেন।

যদি সরকারিভাবে আরামকো কোম্পানির নিয়োগ সার্কুলারের মাধ্যমে সৌদি আরবে প্রবেশ করা যায়, তবে ভিসা খরচ অনেক কম হয়। তবে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা করালে খরচ কিছুটা বেশি হয়, যা প্রায় ৪ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যের এই মরুভূমিময় দেশ সৌদি আরবে আরামকোর মতো আরও অনেক বড় বড় কোম্পানি রয়েছে যেখানে অনেকে কাজ করতে আগ্রহী। আরামকো কোম্পানিতে ভিসা এবং বেতন সংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য আপনি ইন্টারনেটে "সৌদি আরবের আরামকো কোম্পানি ভিসা বেতন কত" লিখে অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন।

সৌদি আরব কোম্পানি ভিসার সুবিধা

সৌদি আরবের কোম্পানিগুলোর অধীনে কাজের ভিসা পাওয়া কর্মীদের জন্য বেশ কিছু আকর্ষণীয় সুবিধা রয়েছে, যা জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
১। উচ্চ বেতনঃ অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় সৌদি আরবে কর্মীদের জন্য বেতনের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
  • তেল নির্ভর অর্থনীতি: সৌদি আরবের শক্তিশালী তেল ও গ্যাস শিল্প এবং বড় নির্মাণ খাত ভালো বেতন দিতে সক্ষম।
  • করমুক্ত সুবিধা: সৌদি আরবে সাধারণত কর্মীদের বেতনের উপর কোনো আয়কর দিতে হয় না। এর মানে হলো, আপনার চুক্তিতে যে বেতন উল্লেখ থাকে, তার পুরো অংশটাই আপনি হাতে পান, যা আপনার সঞ্চয়ের পরিমাণ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
  • দক্ষতার কদর: বিশেষ করে প্রকৌশল, স্বাস্থ্যসেবা এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ কর্মীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের উচ্চ বেতন কাঠামো অনুসরণ করা হয়।
২। থাকা-খাওয়ার সুবিধাঃ সৌদি আরবের বেশিরভাগ কোম্পানিই বিদেশী কর্মীদের জন্য থাকা-খাওয়ার সুবিধা দিয়ে থাকে, যা খরচ কমাতে বিরাট সহায়ক:
  • আবাসন ব্যবস্থা: কোম্পানিগুলো সাধারণত কর্মীদের জন্য বিনামূল্যে আবাসন বা থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। এই আবাসনগুলো অনেক সময় আধুনিক 'লেবার ক্যাম্প' বা ভালো অ্যাপার্টমেন্ট হতে পারে। এর ফলে কর্মীদের আর ব্যক্তিগতভাবে বাড়ি ভাড়া নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।
  • খাবারের সুবিধা: অনেক বড় কোম্পানি কাজের চুক্তির অংশ হিসেবে কর্মীদের জন্য বিনামূল্যে খাবার অথবা খাবারের জন্য মাসিক একটি ভাতা প্রদান করে থাকে। এই সুবিধাটি জীবনযাত্রার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়।
৩। চিকিৎসা সুবিধাঃ কোম্পানি ভিসার অধীনে কর্মরত কর্মীরা সাধারণত চমৎকার স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা পেয়ে থাকেন:
  • স্বাস্থ্য বীমা: সৌদি আরবে কর্মরত বিদেশী কর্মীদের জন্য কোম্পানি কর্তৃক স্বাস্থ্য বীমা সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক। এই বীমার মাধ্যমে কর্মী এবং চুক্তির ওপর নির্ভর করে তাদের পরিবারও ভালো মানের চিকিৎসা পরিষেবা পেয়ে থাকে।
  • জরুরী পরিষেবা: বীমার অধীনে হাসপাতাল পরিদর্শন, ঔষধপত্র এবং জরুরী চিকিৎসা পরিষেবাগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা কর্মীদের অসুস্থতার সময় অর্থনৈতিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়।
৪। প্রমোশন ও ইনক্রিমেন্টঃ সৌদি আরবের কর্মসংস্কৃতিতে ভালো কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচলন রয়েছে, যা কর্মীদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা:
  • বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট: বেশিরভাগ কোম্পানিতেই কর্মীদের বার্ষিক কর্মক্ষমতা মূল্যায়নের ভিত্তিতে বেতনে একটি নির্দিষ্ট শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়
  • পেশাগত অগ্রগতি: যারা নিষ্ঠা ও দক্ষতা প্রদর্শন করেন, তাদের জন্য প্রমোশন বা উচ্চতর পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ থাকে। এর ফলে পদমর্যাদার সাথে সাথে বেতনও বাড়ে, যা কর্মীদের দীর্ঘমেয়াদী ক্যারিয়ার গঠনে সহায়তা করে।
৫। বিদেশ ভ্রমণঃ বিদেশি কর্মীদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় সুবিধা, যা পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্ট লাঘব করে:
  • বিমান টিকেট: চুক্তির শর্তানুসারে, কোম্পানিগুলো সাধারণত কর্মীদের প্রতি বছর একবার বা দুই বছর পর একবার দেশে আসা-যাওয়ার বিমান টিকেট প্রদান করে থাকে।
  • বার্ষিক ছুটি: কর্মীরা চুক্তির মেয়াদ অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনের বার্ষিক ছুটি পান। এই ছুটির সময় তারা দেশে পরিবারের সাথে দেখা করতে বা ছুটি কাটাতে যেতে পারেন, যার যাতায়াত খরচ কোম্পানি বহন করে।

সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)

প্রশ্ন: কোম্পানি ভিসা পেতে কত দিন সময় লাগে?
উত্তর: কোম্পানির ভিসা পেতে সাধারণত ১ থেকে ৩ মাস সময় লাগতে পারে। তবে ভিসাপ্রাপ্তির এই সময়টা কোম্পানির অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্রের ওপর ভিত্তি করে কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।

প্রশ্ন: আমি কিভাবে একটি ভালো কোম্পানি খুঁজে পাব?
উত্তর: ভালো কোম্পানি খুঁজে বের করতে আপনি অনলাইন জব পোর্টাল, রিক্রুটিং এজেন্সি এবং পরিচিতদের সাহায্য নিতে পারেন। তবে আবেদন করার আগে অবশ্যই কোম্পানি সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নেওয়া উচিত।

প্রশ্ন: সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা কি নবায়ন করা যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, আপনার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তা নবায়ন করার সুযোগ রয়েছে। তবে এর জন্য আপনার কোম্পানি এবং সৌদি সরকারের নির্ধারিত নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে।

প্রশ্ন: সৌদি আরবে কাজের পরিবেশ কেমন?
উত্তর: সৌদি আরবে কাজের পরিবেশ সাধারণত ভালো হয়ে থাকে। তবে সেখানে কাজের চাপ এবং স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা রাখাটা জরুরি।

প্রশ্ন: সৌদি আরবের কোম্পানিগুলোতে কি কর্মীদের আবাসন সুবিধা আছে?
উত্তর: অনেক কোম্পানিই তাদের কর্মীদের জন্য আবাসন সুবিধা দিয়ে থাকে। এই সুবিধা আপনার কাজের চুক্তিপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকবে।

প্রশ্ন: সৌদি আরবে কোম্পানি ভিসা পাওয়ার পর কি পরিবারকে সাথে নিয়ে যাওয়া যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, কোম্পানি ভিসা হাতে পাওয়ার পর আপনি চাইলে ফ্যামিলি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন এবং আপনার পরিবারকে সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন। তবে এর জন্য আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে।

প্রশ্ন: সৌদি আরবে কি ট্যাক্স দিতে হয়?
উত্তর: সৌদি আরবে সাধারণত কর্মীদের আয়ের উপর ট্যাক্স দিতে হয় না। তবে ভ্যাট (VAT) প্রযোজ্য।

প্রশ্ন: সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার আবেদন কখন করা উচিত?
উত্তর: সাধারণত সৌদি কোম্পানি কর্তৃক কর্মীর নিয়োগের সার্কুলার প্রকাশের পরবর্তী সময়ে সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা আবেদন করতে হয়।

লেখকের শেষ মতামত

আপনারা যারা সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার বেতন কত, তা জেনে ভিসা করতে আগ্রহী, কিন্তু বর্তমানে কোম্পানি ভিসার বেতন সম্পর্কে কোনো তথ্য পাচ্ছেন না বা ভিসা আবেদনের সঠিক পদ্ধতি না জানায় আবেদন করতে পারছেন না তাদের জন্যই আজকের এই আলোচনা।

এই পোস্টটিতে সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার বেতন কত তা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা আপনাদের অনেক কাজে আসবে। এই ধরনের আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চাইলে আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটটি শেয়ার করে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরিফুল প্লাস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url