নরওয়ে যেতে কত টাকা লাগে 2026 - নরওয়ে সর্বনিম্ন বেতন কত জানুন

নরওয়ে হলো ইউরোপের উত্তর কোণে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান উপদ্বীপের হৃদয়ে অবস্থিত একটি দেশ। গভীর নীল ফিয়র্ড, তুষারে মোড়ানো পর্বতমালা, সবুজ উপত্যকা এবং নির্জন দ্বীপপুঞ্জের সমাহারে গঠিত এই দেশটিকে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য বলা যেতে পারে। নরওয়ে যেতে কত টাকা লাগে সেই তথ্য জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
নরওয়ে যেতে কত টাকা লাগে
নরওয়ে তার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, কম অপরাধের হার এবং উন্নত আইন-শৃঙ্খলার জন্য বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। যারা উন্নত জীবনযাত্রা এবং নিরাপদ কর্মসংস্থান খুঁজছেন, তাদের জন্য নরওয়ে নিঃসন্দেহে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে। তাহলে চলুন নরওয়ে যেতে কত টাকা লাগে জেনে নেই।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ

নরওয়ে যেতে কত টাকা লাগে

নরওয়ে ইউরোপের একটি উন্নত দেশ হওয়ায় সেখানে যেতে খরচ কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। তবে মোট ব্যয়ের পরিমাণ নির্ভর করে আপনার আবেদনের পদ্ধতির ওপর।

এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন: যদি কোনো এজেন্সির মাধ্যমে নরওয়ে যাওয়ার আবেদন করা হয়, তাহলে মোট খরচ ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এজেন্সিগুলো ভিসা প্রসেসিং, প্লেনের টিকিট এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সব কাজ করে দেওয়ায় এই ক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশি লাগে।

নিজে আবেদন: অন্যদিকে, আপনি যদি নিজে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন, তাহলে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেকটা কম হবে। সে ক্ষেত্রে নরওয়ে যেতে আনুমানিক ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকার মধ্যে খরচ হয়ে যেতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায় যে, টুরিস্ট বা স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে খরচ কিছুটা কম হয়। বিশেষ করে স্কলারশিপের সুযোগ থাকায় স্টুডেন্ট ভিসা বেশ জনপ্রিয়। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে নরওয়ে যেতে চান, তাহলে এই খরচটি মাথায় রাখতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে নরওয়ে যাওয়া কিছুটা কঠিন হওয়ায় খরচটাও একটু বেশি হয়।

তবে যদি আপনি স্টুডেন্ট ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পান, তাহলে এই খরচটা সাধারণত ৯ থেকে ১০ লাখ টাকার মতো হতে পারে। নরওয়েতে যাওয়ার খরচ ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভিন্ন হয়। স্টুডেন্ট এবং টুরিস্ট ভিসার খরচ সাধারণত কম থাকে। বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা মূলত পড়ালেখার উদ্দেশেই সবচেয়ে বেশি নরওয়েতে যান।

মোটকথা, আপনি কীভাবে নরওয়ে যাচ্ছেন, তার উপরেও টাকার পরিমাণ কম বেশি হতে পারে। নরওয়েতে বিভিন্ন ধরনের ভিসা চালু আছে, যেমন:
  • ওয়ার্ক পারমিট ভিসা।
  • স্টুডেন্ট ভিসা।
  • টুরিস্ট ভিসা।
  • মেডিকেল ভিসা।
  • বিজনেস ভিসা ও
  • ফ্যামিলি ভিসা।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা: আপনি যদি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় নরওয়ে যেতে চান, তাহলে আপনার খরচ কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

স্টুডেন্ট ভিসা (স্কলারশিপ ছাড়া): স্টুডেন্ট ভিসায় নরওয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ আপনার স্কলারশিপের সুযোগের ওপর নির্ভর করে কম বা বেশি হতে পারে।

স্টুডেন্ট ভিসা (ফুলি ফান্ডেড স্কলারশিপ): তবে আপনি যদি ফুলি ফান্ডেড স্কলারশিপ নিয়ে নরওয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে পারেন, তাহলে মোটামুটি ৪ থেকে ৮ লক্ষ টাকার মধ্যে আপনার খরচ হয়ে যেতে পারে।

নরওয়ে কাজের বেতন কত টাকা

নরওয়েতে কাজের বেতন মূলত কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে। আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হন, তাহলে বেশি বেতনে কাজ করার সুযোগ পাবেন। অন্যদিকে, কাজের ওপর একদম দক্ষতা না থাকলে, বেতন কিছুটা কম হতে পারে।
তবে, নরওয়েতে কাজের বেতন ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে, যেকোনো কাজে দক্ষ একজন ব্যক্তি এর চেয়েও বেশি বেতনে চাকরি করে থাকেন। এজন্য, নরওয়ে যেতে চাইলে যে কাজ করার জন্য ভিসার আবেদন করছেন, সেই কাজটিতে দক্ষতা অর্জন করা জরুরি।

বাংলাদেশ থেকে নরওয়ে যেতে চাইলে, আপনি আমি প্রবাসী অ্যাপের মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। এরপর, বিএমইটি থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। এতে করে, কাজের ওপর আপনার দক্ষতা তৈরি হবে, যার ফলে আপনি নরওয়ে গিয়েই ভালো বেতনে কাজ শুরু করতে পারবেন।

নরওয়ে সর্বনিম্ন বেতন কত ২০২৬

নরওয়ে বিশ্বের অন্যতম সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ, যেখানে কর্মীদের জন্য উন্নত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। দেশটিতে সরকার নির্ধারিত কোনো ন্যূনতম বেতন কাঠামো নেই, তবে সাধারণভাবে এখানে উচ্চ মজুরি দেওয়া হয়। বর্তমানে নরওয়েতে সর্বনিম্ন গড় বেতন প্রায় ৪ লক্ষ টাকা।
নরওয়ে সর্বনিম্ন বেতন কত
তবে মনে রাখতে হবে, এখানকার জীবনযাত্রার খরচও তুলনামূলকভাবে বেশি। সাধারণত কর্মীদের সপ্তাহে ৩৭.৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয় এবং প্রতিদিন ৩০ মিনিটের বিরতি পাওয়া যায়। অতিরিক্ত সময় কাজ করলে তার জন্য ওভারটাইম বেতন দেওয়া হয়।

নরওয়ের অন্যতম আকর্ষণীয় ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হলো, দেশটিতে ছয় মাস দিন এবং ছয় মাস রাত থাকে। উচ্চ বেতন, উন্নত কর্মপরিবেশ ও নিরাপদ জীবনযাত্রার কারণে নরওয়ে কাজের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য।

নরওয়ে দৈনিক সর্বনিম্ন বেতন কত?

অনেকেই নরওয়েতে দৈনিক সর্বনিম্ন বেতন কত, সেই সম্পর্কে জানতে চান। যেহেতু নরওয়ে একটি ইউরোপীয় দেশ, তাই এখানকার দেশগুলোতে সাধারণত দৈনিক ৮ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ৫ দিন কাজ করতে হয়। সেই হিসেবে, একজন ব্যক্তি মাসে মোট ২০ দিন বা ১৬০ ঘণ্টা কাজ করেন।

আমরা জানি, নরওয়েতে মাসিক (১৬০ ঘণ্টার জন্য) সর্বনিম্ন বেতন হলো ৫৪,০০০ NOK। এর ওপর ভিত্তি করে প্রতি ঘণ্টায় বেতন দাঁড়ায় ৩৩৭.৫ NOK।

তার মানে, নরওয়েতে একজন ফুল টাইম কর্মীর দৈনিক ৮ ঘণ্টায় ইনকাম হয় ২,৭০০ NOK বা প্রায় ২৫৮ USD, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা।

ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বিং ও পেইন্টার কাজের বেতন?

কারো যদি ইলেকট্রিশিয়ান ও প্লাম্বিং কাজের অভিজ্ঞতা থেকে থাকে, তাহলে তিনি নরওয়ে যেতে পারেন।

নরওয়েতে কারো অধীনে এই কাজগুলো করলে প্রধান কর্মীকে ঘণ্টা প্রতি ২১১.৭০ ক্রোন করে দেওয়া হয়ে থাকে। আর যদি আপনার কোনো সহযোগী থেকে থাকে, তাহলে সে ঘণ্টা প্রতি ১৮৫ ক্রোন করে বেতন পাবে।

যাদের এই বিষয়ে প্রফেশনাল কোনো ডিগ্রি নেই, তারা নরওয়েতে এই সকল কাজগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় কোর্স করতে পারবেন।

রেস্টুরেন্ট, ক্যাটারিং, হোটেল, ট্যুরিজম কাজের বেতন?

নরওয়েতে অন্যান্য কিছু কাজেও ভালো বেতন দেওয়া হয়ে থাকে। যাদের বয়স ২০ বছরের উপরে এবং এই কাজের ওপর চার থেকে পাঁচ মাসের ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারা কমপক্ষে ঘণ্টা প্রতি ১৬৭ ক্রোন বেতন পেয়ে থাকেন। আর কোনো হেল্পার থেকে থাকলে তিনি ঘণ্টা প্রতি ১৩৪ ক্রোন করে বেতন পাবেন।

তাছাড়া, এসব কাজ থেকে আরও অনেক ধরনের টিপস পাওয়ার সুযোগ থাকে, যা মাস শেষে হিসাব করলে অনেক বেশি অর্থ হতে পারে। গবেষক, ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তার ইত্যাদি পেশার মধ্যে নরওয়েতে সর্বোচ্চ বেতন সাধারণত গবেষক ও চিকিৎসকরা পেয়ে থাকেন। এরপরেই রয়েছে ইঞ্জিনিয়াররা।

উচ্চ বেতনের পেশাগুলোতে বেতনের পরিমাণ সাধারণত অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে থাকে।
  • চিকিৎসক: একজন চিকিৎসকের বাৎসরিক বেতন কমপক্ষে চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ক্রোন থেকে পাঁচ লক্ষ ক্রোন পর্যন্ত হতে পারে।
  • ড্রাইভার: অন্যান্য পেশার যারা কাজ করে থাকেন, যেমন ড্রাইভারদের বাৎসরিক বেতন চার লক্ষ দশ হাজার ক্রোন থেকে চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ক্রোন পর্যন্ত হতে পারে।
নরওয়েতে সর্বনিম্ন বেতন সাধারণত কনস্ট্রাকশন কর্মীদের দেওয়া হয়ে থাকে।

নরওয়েতে কোন কাজের বেতন বেশি

নরওয়ে যেতে কত খরচ হয়, সেই তথ্য জানার আগে দেশটি সম্পর্কে কিছু জরুরি তথ্য জেনে নেওয়া প্রয়োজন। ইউরোপের এই দেশটিতে অন্যান্য দেশের তুলনায় কর্মীদের বেতন বেশি। 
নরওয়েতে কোন কাজের বেতন বেশি
তবে মনে রাখতে হবে, নরওয়েতে যেমন কাজের বেতন বেশি, তেমনি জীবনযাত্রার খরচও কম নয়, অর্থাৎ তা তুলনামূলকভাবে বেশি।
এই দেশে সরকারিভাবে কোনো কাজের জন্য নির্দিষ্ট বেতন নির্ধারণ করা নেই। বেতন মূলত নির্ভর করে আপনার কাজের দক্ষতার ওপর। যদি কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তি কাজে যোগ দেন, তাহলে তার বেতনের পরিমাণও বেশি হয়। যারা গবেষণামূলক কাজে যুক্ত থাকেন, তাদের বেতন সবচেয়ে বেশি হয়।

নর্ডিক রাষ্ট্র নরওয়েতে 🇳🇴 কোনো নির্দিষ্ট সর্বনিম্ন বেতন কাঠামো নেই। তবে, কর্মীদের বয়স, দক্ষতা এবং যোগ্যতা বিবেচনা করে সাধারণত সবার বেতন নির্ধারিত হয়। বিশেষত, যদি আপনার বয়স ১৮ বছরের বেশি হয়, তবে নরওয়ের নিয়োগকর্তারা আপনার কাজের জন্য প্রতি ঘণ্টা হিসেবে বেতন নির্ধারণ করবেন।

নরওয়েতে সর্বোচ্চ বেতন দেওয়া হয় যেসব খাতে:
  • কৃষি ও ফার্মিং
  • কনস্ট্রাকশন
  • ক্লিনিং স্টাফ
  • সি ফুড ওয়ার্কার্স
  • ইলেকট্রনিক্স হসপিটালিটি
  • রিসার্চ

নরওয়ে কোন কাজের চাহিদা বেশি

নরওয়ে একটি উন্নত দেশ হওয়ায় এখানে অনেক ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে। তবে যারা সেখানে যেতে চান, তাদের জন্য আগে থেকে নরওয়েতে কোন কাজের চাহিদা বেশি, সে সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যাওয়া ভালো।

মনে রাখবেন, সব দেশেই দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার মূল্য বেশি। এসব কারণে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীদের নরওয়েতে বেশ ভালো বেতন দেওয়া হয়। তাই কোনো কাজে দক্ষতা অর্জন করে যেতে পারলে সেখানে ভালো আয় করা সম্ভব। কাজের পাশাপাশি সেখানে উন্নতমানের পরিবেশও পাওয়া যায়।

সাধারণত যে সেক্টরগুলোতে ভালো বেতন দেওয়া হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
  • কনস্ট্রাকশন (নির্মাণ)
  • কৃষি ও ফার্মিং
  • ক্লিনিং স্টাফ (পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ)
  • ইলেকট্রনিক্স
  • হসপিটালিটি (আতিথেয়তা)
  • গবেষণা
এছাড়াও নরওয়েতে বর্তমানে আরও বেশ কিছু কাজের চাহিদা আছে, সেগুলো হলো:
  • Plumber
  • ইলেকট্রিশিয়ান
  • নির্মাণ শ্রমিক
  • ক্লিনার
  • রেস্টুরেন্ট কর্মী
  • হোটেল কর্মী
  • ডেলিভারি ম্যান
  • ড্রাইভিং

নরওয়ে যেতে কি কি লাগে

নরওয়ে যেতে চাইলে ভিসা আবেদন করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লেগে থাকে। নরওয়ে যেতে কী কী লাগে, তার একটি তালিকা নিচে উল্লেখ করে দেওয়া হলো:
  • ন্যুনতম ৬ মাস মেয়াদসম্পন্ন একটি বৈধ পাসপোর্ট
  • ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
  • মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট এর কপি
  • নরওয়ে ওয়ার্ক পারমিট এর একটি কপি
  • পাসপোর্ট সাইজের কয়েক কপি রঙিন ছবি
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর একটি কপি
  • কাজের অভিজ্ঞতার বা দক্ষতার প্রমাণপত্র
  • নরওয়ে বা ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সনদ
  • এসএসসি/এইচএসসি/সমমান পরীক্ষার সনদপত্র
উপরোক্ত কাগজপত্রগুলো দিয়ে আপনি নরওয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদন করার পর ভিসা হয়ে গেলে আপনি বিমানের টিকিট কেটে নরওয়ে যেতে পারবেন। নরওয়ে গিয়ে কাজ করার মাধ্যমে আপনি টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

বাংলাদেশ থেকে নরওয়ে যাওয়ার উপায়

নরওয়েতে যদিও কয়েক ধরনের ভিসা পাওয়া যায়, তবুও বাংলাদেশ থেকে যারা যেতে চান, তাদের জন্য নরওয়েতে ভিসা পাওয়াটা অনেকটা কঠিন, অর্থাৎ প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল।

দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে কিছু ছাত্র-ছাত্রী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করে থাকেন এবং আবেদন প্রক্রিয়ার সকল কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও ভিসা পেতে অনেকটা ঝামেলায় পড়েন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশীদের জন্য নরওয়েতে যাওয়া অর্থাৎ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়াও অনেকটা কঠিন হয়ে থাকে।

তবে যাওয়ার জন্য কয়েক ধরনের ভিসা করা যেতে পারে, তা হলো:
  • নরওয়ে স্টুডেন্ট ভিসা
  • নরওয়ে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
  • নরওয়ে টুরিস্ট ভিসা
নরওয়ে যেতে চাইলে সাধারণত তিনটি ভিসার মাধ্যমে যাওয়া সহজ। এদের মধ্যে অনেকেই পড়াশোনার জন্য স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে নরওয়েতে যান। ইউরোপের এই দেশটি শেনজেনভুক্ত হওয়ায় টুরিস্ট ভিসাকে সেখানে শেনজেন ভিসা বলা হয়। ভ্রমণের জন্য এই ভিসার মাধ্যমে ৩০ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত সময়সীমা থাকে।

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নরওয়েতে সব সময় উন্মুক্ত থাকে না; এটি মাঝে মাঝে ইস্যু করা হয়। আপনি যদি এই ভিসার জন্য আবেদন করতে চান, তবে আপনাকে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জমা দিতে হবে:
  • কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • মেডিকেল রিপোর্ট
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
  • পাসপোর্ট
  • অভিজ্ঞতার অন্যান্য কাগজপত্র

নরওয়ে স্টুডেন্ট ভিসা

পড়াশোনার জন্য অনেকেই স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে নরওয়েতে যেয়ে থাকেন। নরওয়েতে স্টুডেন্ট ভিসায় পড়ার জন্য কিছু ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা লাগে:
  • একাডেমিক যোগ্যতা: স্টুডেন্ট ভিসা পেতে হলে একাডেমিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৭০% নাম্বার পেতে হবে।
  • ব্যাচেলর ডিগ্রীর জন্য: কেউ যদি ব্যাচেলর ডিগ্রী করতে চান, তাহলে কমপক্ষে এইচএসসি (HSC) পাশের পর বাংলাদেশে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর পড়াশোনা করতে হবে।
  • মাস্টার্স ডিগ্রীর জন্য: নরওয়েতে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে মাস্টার্স করতে হলে বাংলাদেশে তিন বছরের ব্যাচেলর কোর্স কমপ্লিট করতে হবে।
আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর:
  • স্টুডেন্ট ভিসায় পড়তে যেতে হলে আইইএলটিএস স্কোর কমপক্ষে ৬.০ হতে হবে।
  • মাস্টার্স প্রোগ্রামে যেতে হলে ৬.৫ স্কোর তুলতে হবে।
নরওয়েতে নয়টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধীনে ১৫০টির মতো কলেজ রয়েছে, যেখান থেকে উন্নত শিক্ষা লাভ করা যাবে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে চান, উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করা যাবে।

নরওয়ে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

যেহেতু নরওয়েতে কাজের বেতন বেশ ভালো, তাই ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আপনাকে অবশ্যই কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট সাথে নিতে হবে। কোনো এজেন্সির মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করলেও, সেখানে আপনার কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। এতে করে সেখানে গিয়ে আপনি একটি নির্দিষ্ট কাজ পাবেন।

উচ্চমানের জীবন পেতে হলে পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। তাই দেশ থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে নরওয়ে এসে একটি উন্নত জীবনযাপন শুরু করুন। নরওয়েতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য যে কাগজপত্রগুলো জমা দিতে হবে, তা নিচে দেওয়া হলো:
  • তাদের দক্ষতা সার্টিফিকেট
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • মেডিকেল রিপোর্ট
  • জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
  • পাসপোর্ট
  • পূর্বের ট্রাভেলের প্রমাণপত্র (যদি প্রয়োজন পড়ে)
  • কাজের অভিজ্ঞতা
যদি সবগুলো কাগজপত্র জোগাড় হয়ে থাকে, তাহলে আপনারা সরাসরি কোনো এজেন্সি অথবা বিএমইটি ভবনে গিয়ে নরওয়ে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কীভাবে করবেন—এই প্রক্রিয়াটি জেনে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

নরওয়ে টুরিস্ট ভিসা

নরওয়ে যেহেতু শেনজেনভুক্ত একটি দেশ, তাই নরওয়ে টুরিস্ট ভিসাকে শেনজেন ভিসা বলেও চালিয়ে যাওয়া যায়। শেনজেন ভিসা ব্যবহার করে ৩০ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত ভ্রমণ করা যাবে। নরওয়ে টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার জন্য কী কী ডকুমেন্ট লাগবে, তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
  • ভিসা আবেদনকারী ব্যক্তির পাসপোর্ট লাগবে। (মেয়াদ ৬ মাসের বেশি আবশ্যক)
  • সাম্প্রতিক তোলা দুই কপি ছবি লাগবে।
  • পাসপোর্টে ডাটা পেজগুলোর ফটোকপি যুক্ত করতে হবে।
  • হোটেল বুকিং এর তথ্য লাগবে।
  • ভ্রমণকারী কোন কোন স্থানে ভ্রমণ করতে চাচ্ছেন তার তথ্য লাগবে।
  • অন্তত বিগত তিন মাসের ব্যক্তিগত হিসাব বিবরণী লাগবে।
নরওয়ে ভ্রমণের আগে নির্ধারিত তারিখের চার থেকে ছয় সপ্তাহ আগে ভিসা আবেদন পত্র জমা দেওয়া উচিত। আবেদন পত্র জমা দেওয়ার পর ১২ থেকে ১৫ কর্ম দিবসের মধ্যেই নরওয়ে ভিসা ইস্যু হয়ে যায়।

নরওয়ে যেতে কত বছর বয়স লাগে

নরওয়েতে কাজ করার জন্য যেতে চাইলে ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে। ১৮ বছরের কম হলে নরওয়ে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
যারা নরওয়ে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে চাচ্ছেন, তাদের বয়স যদি ১৮ বছরের উপরে হয়, তাহলে ভিসা আবেদন করতে পারেন। তবে, কাজের ওপর ভিত্তি করে অনেক সময়ে বয়সের এই সীমাটি কমবেশি হতে পারে।

নরওয়ে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিতে চাইলে সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর হতে হয়। তবে, কিছু কাজের ওপর ভিত্তি করে ২১ বছর বয়স পর্যন্ত চেয়ে থাকে। আপনার যদি ২১ বছর বয়সের বেশি হয়ে থাকে, তাহলে নরওয়েতে যে কোনো ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

নরওয়ে সুযোগ সুবিধা সমূহ

নরওয়ে যেতে কত টাকা লাগে এবং নরওয়েতে সর্বনিম্ন বেতন কত, তা জানার পর এবার এখানকার সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানা যাক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং আধুনিক ও উন্নত জীবন যাপনের জন্য ইউরোপের অনেক দেশ থেকে এগিয়ে রয়েছে ইউরোপের উত্তর দিকের দেশ নরওয়ে।

বেশি আয় ও সামাজিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকায় ইউরোপের অনেক নাগরিকও স্থায়ী এবং অস্থায়ী ভিত্তিতে নরওয়েতে বসবাস করতে পছন্দ করেন। শুধু ইউরোপ নয়, বাংলাদেশ থেকেও অনেকে উচ্চ শিক্ষা ও কাজের উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়ত নরওয়েতে পাড়ি জমাচ্ছেন।

নরওয়েতে ইনকামের তুলনায় জীবনযাত্রার ব্যয় (Living Cost) কম হওয়ায় একজন শিক্ষার্থী খুব সহজে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতে পারে। এই কারণেই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে নরওয়ের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

নরওয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিত এর উচ্চ জীবনযাত্রার মান, সুদৃঢ় সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থা এবং অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। এই দেশটি বহু বছর ধরে মানব উন্নয়ন সূচকে (Human Development Index) বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানে অবস্থান করে আসছে এবং এটি বিশ্বের সুখী দেশগুলোর তালিকাতেও সবসময় উপরের দিকে থাকে।

১. জীবনযাত্রা ও নিরাপত্তাঃ নরওয়ে একটি অত্যন্ত নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ দেশ। এখানে অপরাধ প্রবণতা বিশ্বের সর্বনিম্নগুলির মধ্যে একটি। দেশটির শহরগুলো ছবির মতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, এবং এখানকার অধিবাসীরা যথেষ্ট সভ্য ও সুশৃঙ্খল। 

রাত হোক বা দিন, চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাব সাধারণত অনুভব হয় না। এটি নাগরিক ও অভিবাসী সবার জন্যই একটি উন্নত এবং স্থিতিশীল জীবনযাপনের পরিবেশ নিশ্চিত করে।

২. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানঃ তেল, গ্যাস এবং মৎস্য শিল্পের ওপর ভিত্তি করে নরওয়ের অর্থনীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী। দেশটির বেকারত্বের হার কম এবং এখানে উচ্চ কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নরওয়েতে কম দক্ষ কাজের জন্যও অন্যান্য দেশের তুলনায় তুলনামূলক ভালো বেতন দেওয়া হয়। উচ্চ দক্ষ এবং অদক্ষ উভয় প্রকার কর্মীর জন্য এখানে নির্মাণ, কারখানা, কৃষি, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজের সুযোগ রয়েছে।

৩. স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক কল্যাণঃ নরওয়ে তার নাগরিকদের জন্য যুক্তিসঙ্গত খরচে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে। দেশটি একটি শক্তিশালী কল্যাণ ব্যবস্থা বজায় রাখে, যা নাগরিকদের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করে। কর্মক্ষেত্রে সুস্থতা ও কর্ম-জীবনের ভারসাম্যকে এখানে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়।

৪. শিক্ষা ব্যবস্থাঃ নরওয়ের শিক্ষার মান অত্যন্ত উঁচু। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত, দেশের অধিকাংশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার খরচ প্রায় ফ্রি। 

তবে শিক্ষার্থীদের প্রতি সেমিস্টারে একটি সামান্য রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হয়। শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট সময় খণ্ডকালীন কাজ করে তাদের জীবনধারণের খরচ নিজেরাই বহন করতে পারে।

৫. পরিবার ও নাগরিকত্ব সুবিধাঃ যারা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে নরওয়েতে কাজ করতে যান, তারা কিছু সময়ের পরে তাদের পরিবারকে সাথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। এছাড়াও, নির্দিষ্ট সময়সীমা পূরণ সাপেক্ষে নরওয়েতে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি এবং পরবর্তীতে নাগরিকত্ব লাভের সুবিধাও রয়েছে।

সংক্ষেপে বলা যায়, নরওয়ে এমন একটি দেশ যারা শুধু উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই অর্জন করেনি, বরং তাদের নাগরিক ও বাসিন্দাদের জন্য ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা এবং একটি উন্নত সামাজিক জীবন নিশ্চিত করতে পেরেছে।

FAQs

প্রশ্ন: নরওয়ের রাজধানীর নাম কি
উত্তর: নরওয়ের রাজধানীর নাম হলো অসলো (Oslo)। এটি একই সাথে নরওয়ের বৃহত্তম ও সবচেয়ে জনবহুল শহর। অসলো দেশের শিল্প, বাণিজ্য, ব্যাংকিং এবং জাহাজ চলাচল অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

প্রশ্ন: নরওয়ের মুদ্রার নাম কি
উত্তর: নরওয়ের মুদ্রার নাম হলো নরওয়েজিয়ান ক্রোন। এর প্রতীক হলো kr এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা কোড হলো NOK। (নরওয়েজিয়ান ভাষায় "ক্রোন" (krone) শব্দের অর্থ হলো "মুকুট" বা "Crown")।

প্রশ্ন: নরওয়ের ১ টাকা বাংলাদেশের কত
উত্তর: আজকের আপডেট তথ্য অনুযায়ী, নরওয়ের ১ ক্রোন বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৩ টাকা। তবে, এই হার সব সময় পরিবর্তনশীল। আপনি যখন টাকা পরিবর্তন করবেন, তখন ব্যাংক, মানি এক্সচেঞ্জ বা মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের উপর ভিত্তি করে প্রকৃত বিনিময় হার কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।

লেখকের শেষ মতামত

আশা করি, আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি নরওয়ে যেতে কত টাকা লাগে এবং নরওয়েতে সর্বনিম্ন বেতন কত এ বিষয়ে একটি সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। এরকম আরও গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট পেতে arifulplus ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরিফুল প্লাস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url